বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত নাফ নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে, কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালী রহমতেরবিল এলাকা থেকে বুধবার (১ মে) অপহরণ করে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। পরে, বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যা ৭টার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
রাত ৮টার দিকে ১২ বাংলাদেশিকে ছেড়ে দেয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন অপহরণের শিকার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং লম্বাবিল এলাকার আব্দুল জলিল নামের এক যুবক।
তিনি বলেন, “আরকান আর্মি আমাদেরকে নাফনদীর বাংলাদেশ অংশ থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। জাতীয় পরিচয়পত্র চেক করে বাংলাদেশি পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর, দুপুরের দিকেই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলো।”
“কিন্তু সীমান্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে, পরে সন্ধ্যা ৭টায় সীমান্তের নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশের বালুখালীর একটি এলাকায় ১২ জনকে ছেড়ে দিয়ে তারা চলে যায়। আমরা সবাই সুস্থ আছি;” আরো জানান আব্দুল জলিল।
আরাকান আর্মির সদস্যরা বুধবার সকাল ৮টার দিকে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী রহমতেরবিল সীমান্তে নাফ নদী থেকে তাদেরকে ধরে নিয়ে যায় বলে জানান আব্দুল জলিল।
অপহৃতদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, “জেলেরা নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে মাছ ধরতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন।” বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
“আরাকান আর্মির সদস্যরাই আমাদের জেলেদের নিয়ে গিয়েছিলো। কারণ রহমতেরবিল সীমান্তে মিয়ানমার অংশে এখন সে দেশের কোনো সরকারি বাহিনী নেই। যারা ছিলো তারা সবাই সংঘাতের সময় পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছিলো। এখন রহমতেরবিল সীমান্তের ওপারে মিয়ানমানের এলাকাটি আরাকান আর্মির দখলেই আছে;” জানান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর।
এছাড়া, আরো কিছু সূত্রে এম গফুর উদ্দিন খবর পেয়েছেন যে আরাকান আর্মিই জেলেদের নিয়ে গিয়েছিলো; জানান তিনি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর হোসেন বলেন, “যেহেতু সীমান্ত এলাকা থেকে তারা অপহরণের শিকার হয়েছেন, তাই বিষয়টি বিজিবিকে জানানো হয়েছে।”
আরাকান আর্মির নাম সরাসরি না বললেও, তানভীর হোসেন জানান যে তিনি শুনেছেন মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনই জেলেদের অপহরণ করেছিলো। তবে, এ বিষয়ে বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ফিরে আসা জেলেরা
অপহৃত হওয়ার পর ফিরে আসা বাংলাদেশি জেলেরা হলেন; পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল এলাকার জানে আলম (৩৫), আব্দুর রহিম (৪০), আনোয়ারুল ইসলাম (৩৭) সাইফুল ইসলাম (৩০), আয়ুবুল ইসলাম (৩০), শাহীন (২০), গৌজঘোনা এলাকার আবদুর রহিম (৫২), পুটিবনিয়া এলাকার ওসমান গণী (৩০), ওসমান (৩৫), আবুল হাশিম (৩৫), টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং লম্বাবিল এলাকার আব্দুল জলিল (৩২) ও দৈংগ্যাকাটা এলাকার হোসাইন আহমদ (৫৫)।
আরাকান আর্মি কারা
আরাকান আর্মি, সংক্ষেপে এএ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য (আরাকান) ভিত্তিক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। বিভিন্ন তথ্য মতে ২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল এএ প্রতিষ্ঠিত হয়। এএ হলো ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকান (ইউএলএ) এর সামরিক শাখা।
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবি তুলে প্রায় এক যুগ আগে এর সাংগঠনিক উদ্যোগ শুরু হয়। রাখাইন নৃগোষ্ঠীর (আরাকানি) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই সংগঠন নিজেদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে চায়।
কাচিন সংঘাতের সময়, এএ কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) এর সাথে তাতমাডো, অর্থাৎ, মিয়ানমার সামিরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। বেশিরভাগ এএ সৈন্যরা মূলত কেআইএ মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষিত। ২০১৪ সাল থেকে এএ রাখাইনে নিজস্ব প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করে।
মায়ানমার পিস মনিটরের মতে, ২০১৪ সালে এএ এর সদস্য ছিলো ১,৫০০ বা তারও বেশি বেশি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এএ প্রধান দাবি করেন যে তাদের গোষ্ঠীর ৩০,০০০ এর বেশি সৈন্য রয়েছে।