অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের 'জেনোফোবিক' বক্তব্য নিয়ে ভারত ও জাপানের আপত্তি


হোয়াইট হাউসের বাইরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ফটোঃ ৩ মে, ২০২৪।
হোয়াইট হাউসের বাইরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ফটোঃ ৩ মে, ২০২৪।

সপ্তাহের শুরুতে একটি প্রচারণা তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাপান ও ভারতকে "জেনোফোবিক" বা ‘বিদেশীদের ভয়ে ভীত’ দেশ হিসাবে বর্ণনা করেন, যারা অভিবাসীদের স্বাগত জানায় না। ভারত এবং জাপান শনিবার বাইডেনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

জাপান বলেছে, বাইডেন তাদের নীতি সঠিকভাবে না বুঝে এ অভিমত দিয়েছেন। অন্যদিকে ভারত এই মন্তব্যটি সম্পূর্নভাবে প্রত্যাখ্যান করে, নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্মুক্ত সমাজ হিসাবে দাবী করেছে।

তার বক্তব্যে, বাইডেন জাপান ও ভারতকে "জেনোফোবিক" দেশ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং রাশিয়া ও চীন সহ তাদের বিপদগ্রস্ত অর্থনীতির ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা করেন। সেই সাথে তিনি এই চারটি দেশের বিপরীতে অভিবাসীদের দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির তুলনা করেন।

জাপান যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্রদের একজন। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমশ আত্মবিশ্বাসী চীনকে মোকাবেলায় জাপান ও ভারত উভয়ই ‘কোয়াড’ নামের একটি অনানুষ্ঠানিক জোটের অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই কোয়াডে অস্ট্রেলিয়াও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, বাইডেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে একটি সরকারী সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যখন দুই নেতা তাদের "অবিচ্ছেদ্য মিত্রতা" পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের হুমকির মুখে তাদের নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করতে সম্মত হয়েছিলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও গত বছর ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রীয় সফর করেছিলেন, যখন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

হোয়াইট হাউস বলেছে, বাইডেন কোনো দেশকে ছোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে অভিবাসীদের দেশ হিসেবে তুলনা করে এই কথা বলেছেন, এবং জাপানের সাথে সম্পর্ক খারাপ করার কোন ইচ্ছা তাঁর নেই।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ফাইল ফটোঃ ১৪ এপ্রিল, ২০২৪।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ফাইল ফটোঃ ১৪ এপ্রিল, ২০২৪।

শনিবার জাপান সরকারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাইডেনের মন্তব্য এবং পরবর্তী ব্যাখ্যা সম্পর্কে জাপান অবগত রয়েছে। তবে তিনি বলেন যে, বাইডেনের ভাষণের কিছু অংশ জাপানি নীতির সঠিক বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে ছিল না, যেটা দুঃখজনক। তবে জাপান অভিবাসীদের উপস্থিতিকে আমেরিকার শক্তি হিসাবে বাইডেনের বিবেচনার মন্তব্যটি বুঝতে পেরেছে।

তিনি আরও বলেন, জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক "পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী "।

শনিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও বাইডেনের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে উন্মুক্ত সমাজ।

ভারতের জিডিপি

ইকোনমিক টাইমস পত্রিকা আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে জয়শঙ্কর আরও বলেন, “এরকম উদার, বৈচিত্র্যময় এবং বহুত্ববাদী সমাজ পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। আমরা যে শুধু জেনোফবিক নই, তা নয়। আমার সবচেয়ে উন্মুক্ত, বহুত্মবাদী এবং অনেক দিক থেকে বিশ্বের সব চেয়ে বেশি সহনশীল সমাজ।”

তিনি ভারতের বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ উল্লেখ করে আরও বলেন, “এর সাথে অন্যান্য দেশের প্রবৃদ্ধির হার মিলিয়ে দেখেন, আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন।” সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

জাপান অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি জাপানে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য শিথিল নীতি করেছে তারা। জাপানে জন্মহার কমে যাওয়া এবং দ্রুত জনসংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে মনে করা হয়।

এদিকে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে আসা হিন্দু, পার্সি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এবং খ্রিস্টানদের দ্রুত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ধর্মীয় মানদন্ডের উপর নির্ভরশীল একটি নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করেছে ভারত। এই আইনে মুসলিমদের বাদ দেয়া হয়েছে।

XS
SM
MD
LG