অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ: ‘আমরা সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে, এটা দুর্ভাগ্যজনক’


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ৮ মে, ২০২৪।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ৮ মে, ২০২৪।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমরা সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। প্রাণহানি যাতে না হয় তা নিশ্চিতে আমরা ভারতের সঙ্গে আলোচনা করছি।

তিনি বলেন, “আমরা সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা দুই দেশ কাজ করছি যাতে এটা না হয়। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। আমরা নিয়মিত আলোচনা করছি।”

বুধবার (৮ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাংবাদিকেরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, বুধবার সকালে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত হন। উপজেলার রনচন্ডি বিওপির আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪৪৬/১৪ আর-এর কাছে খয়খাটপাড়া দরগাসিং এলাকায় ভারতের ১৭৬ ফকির পাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের টহলরত সদস্যদের গুলিতে তারা নিহত হন বলে জানা গেছে। নিহত দুজন হলেন–ইয়াসিন আলী (২৩) ও আব্দুল জলিল (২৪)।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত ইয়াসিন আলী জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা ব্রহ্মতোল গ্রামের কেতাব আলীর ছেলে এবং আব্দুল জলিল একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের জুনু মিয়ার ছেলে।

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বাংলাদেশে এলে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক সমস্যা রয়েছে। “স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।”

দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে বুধবার রাতে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে কোয়াত্রার।

বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

এর আগে ২০ এপ্রিল ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিবের সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়।

তখন সফর স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “দেখুন, ওখানে (ভারতে) নির্বাচন চলছে। 'ভারতের অভ্যন্তরীণ নানা কারণে সফর স্থগিত করা হয়েছে।”

কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রতিবেশী দেশটির নির্বাচন শেষ হওয়ার পর জুলাইয়ের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

হাছান মাহমুদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

যুক্তরাজ্যের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

বুধবার দুপুরে পররষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিমন্ত্রী।

ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ঢাকার ট্রাফিক পরিস্থিতির উন্নতি এবং মেট্রোরেল, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ও এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি এবং রেস্তোরাঁ ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতে তাদের উদ্যোক্তা প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

যুক্তরাজ্যের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে হাছান মাহমুদ।
যুক্তরাজ্যের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে হাছান মাহমুদ।

২০২৬ সালে এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে বাংলাদেশের আসন্ন উত্তরণের জন্য অভিনন্দন জানান এবং এই অর্থনৈতিক রূপান্তরকালে ও পরে তার সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দেন অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান।

তিনি রোহিঙ্গাদের উদারভাবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং সাম্প্রতিক ১ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডসহ এ বিষয়ে অব্যাহত ব্রিটিশ রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তার নিশ্চয়তা দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে সন্তোষ প্রকাশ করেন, যা ২০২৩ সালে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যুক্তরাজ্য সরকারকে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমর্থন এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ এফডিআই উৎস হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।

হাছান মাহমুদ টেকসই উত্তরণে সহায়তার জন্য ২০৩২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বাজারে তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিযোগ্য বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক ও শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকা দেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীকে জানান যে, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনে সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ, বর্জ্য থেকে জ্বালানি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে। জলবায়ু মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মধ্যেই এই দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান রয়েছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সক্রিয় রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান হাছান মাহমুদ।

দুই মন্ত্রী অভিবাসন ও দক্ষতা উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, গ্রামীণ উন্নয়ন, জলবায়ু ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, গ্রিন এনার্জি, বিমান চলাচল, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন।

XS
SM
MD
LG