সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র প্রদত্ত অস্ত্র রাশিয়ার ভেতরে লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানার জন্য ব্যবহার করার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি জোরালো আবেদন জানাচ্ছে।
হোয়াইট হাউস বলেছে যে তারা রুশ এলাকায় আঘাত হানার জন্য আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহারকে “ “উত্সাহিত কিংবা কার্যকর” করে না। একই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, “শেষ পর্যন্ত , ইউক্রেনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কী ভাবে তারা এই যুদ্ধ পরিচালনা করবে”।
ইউক্রেনকে অস্ত্রায়নের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তার ভূমিকাকে কি ভাবে দেখে এবং কেন কর্মকর্তারা এ কথাটা জোর দিয়ে বলেন যে রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানার জন্য আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না সে সম্পর্কে ভয়েস অফ আমেরিকার ইউক্রেন বিভাগ পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের সঙ্গে কথা বলেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য তার যা প্রয়োজন তা যুক্তরাষ্ট্র কেন দিতে থাকবে এবং তিনি আগামি মাসগুলোতে নেটো ও ইউক্রেনের সম্পর্কের বিবর্তনকে কি ভাবে দেখেন সে সব বিষয় নিয়ে মিলার কথা
বলেন।
ভিওএ: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের সাম্প্রতিক সফরের সময় তিনি কিয়েভকে বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিবর্তন আনবে । তিনি ইউক্রেনের বিজয়ের ব্যাপারে একটা দূরদৃষ্টি তুলে ধরেন । আড়াই বছর যুদ্ধর পর এই কৌশলটা ঠিক কি?
ম্যাথিউ মিলার : আমরা বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি যে ইউক্রেন এই সংঘাতে জয় লাভ করতে পারবে, জয়লাভ করবে। আমরা দেখেছি কিয়েভের উপকন্ঠ থেকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাশিয়ার বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছে। আমরা দেখেছি রাশিয়া প্রথম দিকে যে অঞ্চল দখল করেছিল তার অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চল ফিরিয়ে এনেছে। আর আমরা তাদের সাহসের সঙ্গে লড়তে দেখেছি। আমরা এ ও দেখেছি ইউক্রেন কী ভাবে তার অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করছে যাতে দেশটি তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আর ব্লিংকেনের সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ইউক্রেন কুটনৈতিক, সামরিক , অর্থনৈতিক ভাবে সফল হতে যা করতে পারে তার প্রতি আলোকপত করা।
ভিওএ: সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন বলেন যে ইউক্রেন নেটোর সদস্য হবে। ভিলনিয়াসের তূলনায় ওয়াশিংটনের শীর্ষ সম্মেলনের পর ইউক্রেন নেটোর সদস্যপদ লাভে কয় ধাপ এগিয়ে যাবে ?
মিলার: আমি যুক্তরাষ্ট্র্রের পক্ষে বলবো, আমরা এ ব্যাপারে অত্যন্ত পরিস্কার যে ইউক্রেনের ভবিষ্যত্ নেটোর সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং নেটোর সদস্যরা এটা পরিস্কার করে দিয়েছেন যে ইউক্রেনের ভবিষ্যত্ নেটোতে নিহিত। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইউক্রেনের জনগণের কাছে এটা পরিস্কার করে দেন যে আমাদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন আছে । আর সেই সেতুতে আলো জ্বালাতে হবে যাতে পরিস্কার হয় ইউক্রেনের জনগণ এবং ইউক্রেনের সরকারের জন্য সঠিক পথ কোনটি, মাইলফলকই বা কোনটা।
তবে আমি বলবো এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে একটু পিছিয়ে এটা পরিস্কার করা যে নেটো সদস্যপদে অগ্রগতি সত্ত্বেও আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে আলাপ আলোচনা অব্যাহত রাখি । প্রায় ৩০ টির মতো দেশ আছে যারা ইউক্রেনের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি হয় সম্পাদন করেছে নয়ত এ ব্যাপারে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ইউক্রেনকে এ মর্মে বস্তুনিষ্ঠ নিরাপত্তা প্রতিশ্রতি দেবে যাতে এটা নিশ্চিত করা যায় যে ইউক্রেনের কেবল আজকের প্রতিরক্ষার জন্য নয় , ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষার জন্যও তারা সহায়তা প্রদান করবে।
ভিওএ: রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে পেন্টাগন এবং হোয়াইট হাউসের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্লিংকেন একাধিক বার বলেছেন যে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করাকে যুক্তরাষ্ট্র উত্সাহিত করে না। তবে এটা ইউক্রেনের উপর নির্ভর করছে কি ভাবে তারা যুদ্ধ পরিচালনা করবে । এই দুই অবস্থানের মধ্যে পার্থক্যটা কি একটু ব্যাখ্যা করবেন ?
মিলার: আমাদের সঙ্গে পেন্টাগনের নীতিতে কিংবা আমাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের নীতিতে কোন পার্থক্য নেই। আমাদের সকলেরই একই নীতি আর তা হলো ইউক্রেনের সীমান্তের বাইরে আমরা কোনরকম আঘাত হানাকে উত্সাহিত করি না। আমরা এটা বুঝি যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ছাড়া অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহারটির ব্যাপারে ইউক্রেন নিজে সিদ্ধান্ত নেবে।
ইউক্রেন একটি সার্বভৌম দেশ এবং অন্যখান থেকে পাওয়া অস্ত্র শস্ত্র কিংবা তাদের নিজেদের তৈরি অস্ত্র শস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে তারা নিজেরাই ঠিক করবে । এই সব সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের নিজেদের। আমরা সেই সব অস্ত্র বাইরের কোন দেশে, রাশিয়ায় ব্যবহার করতে দিতে পারি না। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের নীতি এবং সে নীতি এখনও অব্যাহত রয়েছে।
ভিওএ: রাশিয়া যখন খারকিভ অঞ্চলে একটি যুদ্ধক্ষেত্র খুলছে, তখন এরকম নীতি কেন ?
মিলার : ইউক্রেনের নিজেকে সাহায্য করার সক্ষমতাকে আমরা সমর্থন করি এমনকী যখন সম্প্রতি পাশ করা সম্পূরক সহায়তা প্যকেজের কিছু অর্থ বা কিছু অস্ত্র খারকিভ আক্রমণ প্রতিরোধ কর তে ব্যবহার করা হচ্ছে । আমরা প্রথম দিন থেকেই ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি কেবল আপনাদের এটুকু বলতে পারি যে আমরা বরাবর ইউক্রেনের পাশে রয়েছি।আমরা সব সময় তাদের সাথে থাকবো এবং তাদের প্রতিরক্ষার জন্য যা প্রয়োজন তা দেবো।
ভিওএ: যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যপস যে সম্প্রতি একটা বিবৃতি দিয়েছেন যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য চীন যে রাশিয়ার সঙ্গে মিলে “কমব্যাট ইকুইপমেন্ট” তৈরি করছে, সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিক্রিয়া কি? পররাষ্ট্র দপ্তর কি এর কোন প্রমাণ পেয়েছে? আর সেটা যদি নিশ্চিত হওয়া যায় তা হলে বেইজিং’এর জন্য এই সিদ্ধান্তর পরিণতি কি হতে পারে?
মিলার : আমরা এর সমর্থনে কোন গোয়েন্দা সংবাদ পাইনি। আমরা এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে আমাদের সহপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো যে তারা ঠিক কি দেখেছেন। আমি বলবো যুক্তরাষ্ট্রে আমরা নিবিড় ভাবে এই প্রশ্নটি খতিয়ে দেখবো কারণ একটা সময়ছিল যখন আমরা এ ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলাম যে চীন রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দিতে যাচ্ছে।
আর আমরা চীন সরকারকে বেশ পরিস্কার ভাবেই বলেছি যে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা তাদেরকে সেই সীমা অতিক্রম করতে দেখিনি। এখন এ কথা বলার পরও চীনযে কি করে সে নিয়ে আমরাবেশ উদ্বিগ্ন। আমরা দেখেছি চীনা কোম্পানিগুলি মাইক্রো ইলেক্ট্রনিক্স , অপটিকাল সেন্সার এবং অন্যান্য যে সব সরঞ্জাম যেগুলি প্রত্যক্ষ ভাবে সামরিক সরঞ্জাম নয় রাশিয়াকে দেয় এবং রাশিয়া তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পকে এবং যুদ্ধাস্ত্রকে চাঙ্গা করতে ব্যবহার করে।
আমরা পরিস্কার করে বলেছি যে এ সব ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে । আর যেমনটি মন্ত্রী বলেন ,যখন কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি চীনে গিয়েছিলেন তিনি িএই বিষয়টি প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ‘এর কাছে উত্থাপন করেছিলেন এবং বলেন চীন যদি এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা না নেয় , তা হলে যুক্তরাষ্ট্র নেবে।