অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত


ঘূর্ণিঝড় রিমাল
ঘূর্ণিঝড় রিমাল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ। ঘূর্ণঝড়-সংক্রান্ত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ অবস্থায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর সর্তক দেখাতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবার্তায় আরো বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে বর্তমান উত্তর-পশ্মিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হয়েছে।

ঘুর্ণিঝড়টি শনিবার (২৫ মে) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। এটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়র প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা, অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ছুটি বাতিল

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সচেতন, সতর্ক ও সাবধান করছে ওই অঞ্চলের ফায়ার স্টেশনগুলো।

শনিবার (২৫ মে) দুপুরের পর থেকে সচেতনতা সৃষ্টির এই প্রচারণা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। ঘূর্ণিঝড়-পূর্ব, ঘূর্ণিঝড়ের সময় এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সকল কাজ কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করতে ঢাকার সদর দপ্তরে একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

এছাড়া খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। এছাড়া এসব বিভাগের খোলা হয়েছে বিভাগীয় মনিটরিং সেল।

উদ্ধারকারী দলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে উপকূলীয় এলাকাসমূহের সকল ফায়ার স্টেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সকলকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল
ঘূর্ণিঝড় রিমাল

দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতি ফায়ার স্টেশনে ফায়ারফাইটিং টিম, সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, প্রাথমিক চিকিৎসাকা প্রদানকারী দল এবং ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

এছাড়া, প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স, চেইন স, হ্যান্ড স, রোটারি রেসকিউ স, স্প্রেডার, মেগাফোন, র‌্যামজ্যাক বা এয়ার লিফটিং ব্যাগ, ফাস্ট এইড বক্সসহ যাবতীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজসহ রাস্তাঘাট যান চলাচল উপযোগী করার কাজে ফায়ার সার্ভিস নিয়োজিত থাকবে। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত সেচ্ছাসেবীরা। এসব এলাকায় জীবন ও মালামাল সুরক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো কাজে ২৪ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করতে পারবে মানুষ।

সকল আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রয়োজনে উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলোতেও সাধারণ জনগণ আশ্রয় নিতে পারবেন।

ফায়ার সার্ভিসের মনিটরিং সেল, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ সকল বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সারাক্ষণ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবে।

যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে সেবা গ্রহণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন, বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর ১৬১৬৩ অথবা কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের জরুরি মোবাইল নম্বর ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯-এ ফোন করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

এর আগে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জানিয়েছিলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল রবিবার (২৬ মে) বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে। এজন্য রবিবার প্রথম প্রহরে মহাবিপদ সংকেত জারি হতে পারে বলে জানান তিনি।

শনিবার (২৫ মে) সচিবালয়ে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়ে প্রস্তুতি সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

“বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা বুঝতে পেরেছি, ঘূর্ণিঝড় আসন্ন;” বলেন প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় বিপদের পর্যায়ে চলে যেতে পারে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে।

মহিববুর রহমান আরো জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কমবেশি এফেকটেড হতে পারে। ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এজন্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে পারে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

রবিবার (২৬ মে) সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “উপকূলীয় জেলায় আমাদের প্রায় ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র আছে। এগুলো আমরা প্রস্তুত রেখেছি।”

“এছাড়া, প্রত্যেকটি জেলায় পর্যাপ্ত শুকনো খাবারসহ যেসব জিনিস দরকার হবে, এগুলো মজুত রেখেছি। প্রয়োজনে ঢাকা থেকে যাতে আরো পণ্য সরবরাহ দিতে পারি এজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি;” জানান প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।

সাতক্ষীরায় বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলবর্তী শ্যামনগরে শনিবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি ও দমকা বাতাস শুরু হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় বনবিভাগের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জেলেদের নিরাপদ স্থানে ফিরে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।

বুড়িগোয়ালীনি গ্রামের সাহেব আলী বলেন, শনিবার জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত বেশি হয়েছে। পূর্ব সতর্কতা থাকায় পাশ্ববর্তী খোলপেটুয়া, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাশিয়া নদীসমুহের জেলেরা শনিবার মাছ ধরতে নামেনি। এছাড়া সাগর ও সুন্দরবনে অবস্থানরত জেলেরা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন।

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনসহ সব টহলফাঁড়িতে অবস্থানরত বনকর্মীদের সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন ও সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের লোকালয়ে ফিরতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাদের উদ্ধারে বনকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এম সালাউদ্দীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামনগরকে ঘিরে থাকা উপকূল রক্ষা বাঁধের প্রায় ১২৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ থেকে ৮টি পয়েন্টের প্রায় দুই কিলোমটিার ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে মাটি ফেলে উচ্চতা বৃদ্ধিসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে বাঁধের ভাঙন ও ধস ঠেকানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

XS
SM
MD
LG