অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ক্রিশ্চিয়ান এইড: বাংলাদেশে চরম আবহাওয়ার প্রভাব, রোহিঙ্গাদের অবস্থার অবনতি


 ক্রিশ্চিয়ান এইডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। প্রতীকী ছবি।
ক্রিশ্চিয়ান এইডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। প্রতীকী ছবি।

কপ-২৮ সম্মেলনের পর, ৬ মাসে চরম আবহাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী ৪১০০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্রিশ্চিয়ান এইডের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, গত কপ সম্মেলনের পর থেকে তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ।

সোমবার (১০ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল বন্ধ করতে হয়েছে, ফসলের জমি শুকিয়ে গেছে এবং রোহিঙ্গাদের অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাপপ্রবাহে বাংলাদেশের কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে; বিশেষ করে মরিচ, ডাল, সূর্যমুখী, বাদাম ও ধানের মতো ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বেশি।

ত্রিপলের কাঠামোতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মুখোমুখি হতে হয়েছে। যা এই অঞ্চলে ৩৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রা। এই তাপপ্রবাহে বাংলাদেশে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে; বলা হয় ক্রিশ্চিয়ান এইডের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।

ক্রিশ্চিয়ান এইডের প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতিতে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে, ভুক্তভোগী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমবর্ধমান খারাপ আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে।

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, এশিয়াজুড়ে অসংখ্য জীবন কেড়ে নেয়া এই চরম তাপদাহের পেছনে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ রয়েছে। এপ্রিলে বাংলাদেশে ২৪ দিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

পর্যবেক্ষণমূলক বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় এই তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বেড়েছে ৪৫ গুণ এবং তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জলবায়ুর বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের চরম তাপমাত্রা এখন পশ্চিম এশিয়ায় প্রতি ১০ বছর, ফিলিপাইনে প্রতি ২০ বছর (বা এল নিনোর ক্ষেত্রে প্রতি ১০ বছর) এবং বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রতি ৩০ বছরে ঘটতে পারে।

তাপপ্রবাহের কারণে এশিয়ার অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে দেখা দিচ্ছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দা।

প্রতিবেদনটি এমন এক সময় প্রকাশিত হয়েছে; যখন ৬০তম বন জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে কপ-২৮ সম্মেলনের পর থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্ত ৪টি চরম আবহাওয়ার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

ঘটনাগুলো হলো; ব্রাজিল, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকায় বন্যা এবং এশিয়ার বড় অংশজুড়ে তাপপ্রবাহ। এসব ঘটনায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে এবং ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু মানুষ মারা গেছে এবং দেড় লাখের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

বাংলাদেশে দায়িত্বরাত ক্রিশ্চিয়ান এইডের জলবায়ু বিচার বিষয়ক উপদেষ্টা নুশরাত চৌধুরী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এ বছর আমরা এ ধরনের জলবায়ু বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হচ্ছি এবং আমি উদ্বিগ্ন যে বিশ্ব কার্বন নিঃসরণ কমানো শুরু না করা পর্যন্ত পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।”

“এই দুর্যোগের জন্য বাংলাদেশের মানুষ দায়ী না হলেও, তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ কারণেই লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের যথাযথ তহবিল পাওয়া যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ; যাতে এই ধরনের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকা পুনর্নির্মাণের জন্য সহায়তা পেতে পারে;” যোগ করেন নুশরাত চৌধুরী।

গত ৩ জুন শুরু হয়েছে ৬০তম বন জলবায়ু সম্মেলন, চলবে ১৩ জুন পর্যন্ত। এই সম্মেলনের লক্ষ্য হচ্ছে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড কার্যকর করা। জাতিসংঘ অনুমান করেছে, ২০৩০ সাল থেকে বার্ষিক ক্ষতির জন্য ২৯ হাজার কোটি থেকে ৫৮ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ কোটি ডলার সরবরাহ করা হয়েছে।

ক্রিশ্চিয়ান এইডের গ্লোবাল অ্যাডভোকেসি লিড মারিয়ানা পাওলি অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “জলবায়ু সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থায়ন বাড়াতে হবে।”

XS
SM
MD
LG