কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা তাদের কার্যক্রমের সমর্থনে প্রায়ই ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টের কথা উল্লেখ করেন। তাদের এই সব কার্যক্রমের মধ্যে প্রায়শই থাকে শ্লোগান, ভবন দখল করা এবং তাঁবু গাড়া। আইন বিশেষেজ্ঞরা দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টের আওতায় এই কার্যক্রমগুলি কতটা সমর্থনযোগ্য কিংবা সমর্থনযোগ্য নয়।
এই তো, এ বছর বসন্তকালে যুক্তরাষ্ট্রের বহু কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ইসরায়েল হামাস যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই যুদ্ধে ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে তারা যেন সেই সব কোম্পানিকে পরিত্যাগ করে যারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করছে ।
জুন মাসে লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য কলেজগুলিতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের জবাবে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে যেখানে ভাষণ সীমিত করা হয়।
গভর্ণর জেফ ল্যান্ড্রি, যিনি একজন রিপাবলিকান, তিনি সেনেট বিল ২৯৪ স্বাক্ষর করেন যা এমন যে কোন কর্মকান্ডকে ছাড় দেয় যা মুক্ত ভাষণ রক্ষা থেকে অপরাধের শাস্তি আনতে পারে। লুইজিয়ানা ইলিউমিনিটার ওয়েব সাইটে লেখা আছে ক্যাম্পাসের মুক্ত ভাষণের নীতি কোন ক্রমেই নাগরিক আইন অমান্যকে আর সমর্থন করে না।
রিপাবলিকান স্টেট সেনেটর ভ্যালেরি হজেস , যিনি এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন তিনি ইলিউমিনিটারকে বলেন, “ আমরা কলেজ ক্যাম্পাসে যা চাই তা হলো শিক্ষা, সক্রিয়বাদীদের নয়”।
এই আইনগুলির লক্ষ্য হলো নাগরিক অবাধ্যতা ও প্রতিবাদকে খর্ব করা, বিশেষত যা ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সিরাকিউস ইউনিভার্সিটির টালি সেন্টার ফর ফ্রি স্পিচ’এর পরিচালক রয় গাটারম্যান বলেন, “ আমাদের ইতিহাসে আমরা আরেকবার এই সব আইন দেখছি যা সম্ভবত মুক্ত ভাষণকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, বিশেষত সেই ধরণের ভাষণ যা কেউ আপত্তিকর ভাবতে পারে”। তিনি বলেন, “ আমরা এটি দেখেছি মানবাধিকার আন্দোলন এবং ১৯৬০ ‘এর দশকে যুদ্ধ বিরোধী প্রতিবাদের সময়ে”।
এই আইনের অধীনে, “সেই সব কর্মকান্ড যাতে কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীকে কোন ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন জেনে শুনে অর্থায়ন করে যেটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিদেশি প্রতিপক্ষ হিসেবে অভিহিত করেছে” সেগুলোর ক্ষেত্রেও এই সুরক্ষা প্রযোজ্য নয়।
ফাউন্ডেশান ফর ইন্ডিভিজুয়াল রাইটস এন্ড এক্সপ্রেশানের জাক গ্রীনবার্গ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন এটা গুরুত্বপূর্ণ যে এ ধরণের নীতি, “নিরপেক্ষ ভাবে বিষয়বস্তুর দৃষ্টিভঙ্গি” হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে , যার অর্থ হচ্ছে , “জনগণ কি বলছে , কি ভাবছে এবং তারা কি বিশ্বাস করে তাকে ভিত্তি করে এ গুলি জনগণের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না”।
গাটারম্যান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট হচ্ছে “ নাগরিকরা যাতে কথা বলতে পারেন, প্রকাশ করতে পারেন, সমবেত হতে পারেন এবং কোন রকম আইনি নিষেধাজ্ঞা কিংবা শাস্তি ছাড়া সরকারের নীতি সম্পর্কে অভিযোগ করতে পারেন সেটারই সুরক্ষা প্রদান। তবে এ ব্যাপারে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যতিক্রম রয়েছে যেমন দাঙ্গা বাঁধানো, কারও বা অনেকের বদনাম ছাড়ানো” সেগুলি ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট দ্বারা সুরক্ষিত নয়।
এই নিষেধাজ্ঞার বিভিন্ন দিক আছে যেমন জনগণের শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, একটি নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত লোকের সংখ্যা কমানো, খুব ভোরে কিংবা গভীর রাতে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা এবং সরকারি সম্পত্তির উপর কোন কিছু লাগানোর পরিমাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
গ্রীনবার্গ বলেন ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট যদিও প্রতিবাদ জানানোর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণ করে তবে এই সংরক্ষণেরও একটা সীমা আছে। “ ভাষণ ততক্ষণই সুরক্ষিত থাকে যতক্ষণ না তার মাধ্যমে কোন বৈষম্যমূলক হয়রানি করা হয় কিংবা মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হয়”।
তিনি বলেন “প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়ে প্রায়ই যে তাঁবু গাড়া হ, তা ঢালাও ভাবে সুরক্ষিত নয় এবং তা বিষয়বস্তু সম্পর্কিত সময়, স্থান ও ধরণের নিষেধাজ্ঞা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত”। তিনি আরও বলেন তার মানে হচ্ছে ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট , প্রতিবাদ প্রকাশের জন্য ক্যাম্পাস দখল করাকে অধিকার বলে মনে করে না।
এই বিধিনিষেধগুলি নির্ভর করছে প্রতিবাদ বিক্ষোভটি সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটছে তার উপর।
গ্রীনবার্গ বলেন “সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত”।
গাটারম্যান সহমত যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ঠিক সে ভাবে ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, যেমন ভাবে সরকারি বিশ্ববিদ্য়ালয়গুলি কিন্তু বলেন তাদের “ অবাধ বক্তব্য রাখার চেতনা এবং একাডেমিক স্বাধীনতার মধ্যে কাজ করতে হবে”।
গত মাসে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায় যে এপ্রিল মাসে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তাঁবু ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য পুলিশ ডাকা হয় তখন থেকে সারা দেশে ক্যাম্পাসে ৩,১০০ লোককে গ্রেপ্তার কিংবা আটক করা হয়েছে। বেশির ভাগ অভিযোগ ছিল অবৈধ অনুপ্রবেশের অথবা শান্তিভঙ্গের কিন্তু কিছু লোক আর্রও গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, যেমন গ্রেপ্তারের সময়ে বাধা প্রদান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যখন বিবর্তিত হচ্ছে তখন মুক্ত ভাষণ প্রদানের স্বাধীনতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়গুলির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে যাতে মুক্ত ভাষণ দেয়াকে সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায়।