বালুচিস্তান অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ বিরোধী বিদ্রোহীরা সোমবার সেই প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উপর্যুপরি হামলা চালানোর পর চীন পাকিস্তানের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানকে সমর্থন করার প্রত্যয় প্রকাশ করেছে।
ওই হামলায় ৪০ জনেরও বেশি সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। সামরিক বাহিনী জানায় তারা ২০ জনেরও বেশি হামলাকারিকে হত্যা করেছে।
এই প্রদেশে চীনের অর্থায়নে কয়েকটি বড় ধরণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে আছে আরব সাগরে গুরুত্বপূর্ণ গভীর জলের গোয়াদর বন্দর।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন মুখপাত্র লিন জিয়ান এই সর্বসাম্প্রতিক আক্রমণগুলির নিন্দা করেন।
বেইজিং এ মঙ্গলবারের ব্রিফিং এর সময়ে লিন বলেন, “ এই অঞ্চলটিতে পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা শক্তিশালী করতে চীন প্রস্তুত”।
বালুচিস্তান লিবারেশান আর্মি নামের বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি এই সব আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে।
সম্পদে সমৃদ্ধ অথচ দারিদ্র পীড়িত বালুচিস্তান প্রদেশে এই আক্রমণগুলি এমন এক সময়ে সংঘটিত হলো যখন চীনের পিপলস লিবারেশান আর্মি স্থল বাহিনীর কমান্ডার লি চিয়াওমিং পাকিস্তান সফর করছেন। তিনি পাকিস্তানের সেনা প্রধান সৈয়দ আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ বৈঠকটি পারস্পরিক স্বার্থ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সামরিক প্রশিক্ষণ ও দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ করে দেয়”।
বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি বালুচিস্তানে চীন-পাকিস্তান জোটের তীব্র বিরোধীতা করেছে । তারা ২০০৬ সালের পর তৃতীয়বার একটি প্রধান বিচ্ছিন্নতাবাদী অভিযান চালিয়েছে। তারা প্রদেশটির অভ্যন্তরে ও বাইরে চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানগুলিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। সর্বসাম্প্রতিক আক্রমণে কোন চীনা ব্যক্তিকে অবশ্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়নি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তাঁর মন্ত্রী পরিষদকে বলেছেন যে এই আক্রমণের লক্ষ্য হচ্ছে ঐ প্রদেশে চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর নামে পরিচিত কোটি কোটি ডলারের প্রকল্পগুলিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করা।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ এই হামলাগুলি খুব সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হচ্ছে যাতে পাকিস্তানে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়”।
নগদ অর্থে অভাবগ্রস্ত পাকিস্তানে , বিশেষত চীনা নাগরিক ও চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানগুলিকে লক্ষ্য করে এই সব হামলা, বেইজিং এর জন্য উদ্বেগজনক ।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে ঋণগ্রস্ত হয়ে রয়েছে এবং চীনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। গতমাসে কংগ্রেসের এক শুনানি অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডনাল্ড লু বলেন বেইজিং চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডরের আওতায় পাকিস্তানে প্রায় ২৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে ।
একজন পাকিস্তানি বিশ্লেষক মুরাদ আলী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ সাম্প্রতিক আক্রমণগুলো চীনকে চিন্তিত করেছে কিন্তু আমরা অতীতের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে যা দেখছি তা হলো পাকিস্তানকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ে সহায়তা করার পরিবর্তে চীন পাকিস্তানের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে”।
তিনি মার্চ মাসে একজন আফগান নাগরিকের আক্রমণের প্রসঙ্গে বলছিলেন যে আক্রমণে পাঁচ জন চীনা প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়।
ইসলামাবাদে অবস্থিত একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আব্দুল্লাহ খান, ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ এই আক্রমণগুলি বিশেষত চীনের জন্য খুবই উদ্বেগজনক কারণ চীন চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডরের আওতায় পাকিস্তানে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। সরকার সহিংসতা থামানোর জন্য পর্যাপ্ত কিছুই করছে না”।
পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুখোয়া প্রদেশে আত্মঘাতী আক্রমণে পাঁচজন চীনা প্রকৌশলী নিহত হবার পর , চীন তার নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রতি ঝুঁকি দূর করার জন্য মার্চ মাসে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানায়।
ওই আক্রমণের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতি “ এই আক্রমণের দ্রুত ও বিস্তারিত তদন্ত করার, বলিষ্ঠ পদক্ষেপের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরালো করার, নিরাপত্তার ঝুঁকির সম্পূর্ণ অবসান ঘটানো এবং পাকিস্তানে চীনা নাগরিক, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের সর্বাধিক সুরক্ষার আহ্বান জানান।
অক্টোবর মাসে ইসলামাবাদে চীনা রাষ্ট্রদূত জিয়াং জায়দং বলেন চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডরের আওতায় পাকিস্তানকে সরাসরি বিনিয়োগে ২৫০০ কোটি ডলার দেওয়া হয়েছে , পাকিস্তানে ১,৫৫,০০০ চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ৫১০ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে , ৮,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যূৎ উৎপাদিত হয়েছে এবং ৮৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রান্সমিশন গ্রিড চালু করা হয়েছে।
ভয়েস অফ আমেরিকার দীওয়া বিভাগে তৈরি এই সংবাদে পাকিস্তান থেকে মালিক ওয়াকার আহমেদ এবং ইহসান মোহাম্মদ খান অবদান রেখেছেন।