ইসরায়েলের উপর ইরানের হামলা সম্পর্কে যা জানা গেছে
ইসরায়েলের উপর ইরানের দ্বিতীয় দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলাফলের পূর্ণ চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে যা জানা গেছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলঃ
- মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭.৩০-এ ইসরায়েল জানায়, ইরান থেকে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়েছে।
- গোটা ইসরায়েল জুড়ে সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়।
- ইরান জানায়, সম্প্রতি তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহকে হত্যা, ইসরায়েলি হামলায় বৈরুতে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ, অন্যান্য শীর্ষ হিজবুল্লাহ কমান্ডার এবং ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডস বাহিনীর জেনেরাল আব্বাস নিলফরুশানের মৃত্যুর পাল্টা জবাব হিসেবে, আত্মরক্ষার অধিকারের ভিত্তিতে তারা এক রাশ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেছে।
- ইসরায়েল বলে তাদের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রর বেশির ভাগ ভূপাতিত করেছে। তবে হতাহতের সংখ্যা বা ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি।
- যুক্তরাষ্ট্র জানায় তাদের নৌবাহিনীর দুটো যুদ্ধ জাহাজ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইসরায়েলকে সক্রিয় ভাবে সাহায্য করে এবং অন্তত ১২টি ইন্টারসেপ্টার রকেট নিক্ষেপ করে।
- ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডস বাহিনী দাবী করে তাদের ক্ষেপণাস্ত্রর ৯০ শতাংশ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। তারা বলে, তেল আভিভের কাছে তিনটি সামরিক ঘাঁটি এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা কেন্দ্র আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল।
- যুক্তরাষ্ট্র হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির জন্য ইরানের নিন্দা জানায় এবং ইসরায়েলের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানান, পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে তারা ইসরায়েলের সাথে আলোচনা করবেন।
- ইরান এবং ইরাকে শত শত মানুষ ইসরায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবরে রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করে।
- ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন ইরান বড় ভুল করেছে এবং সেজন্য তাদের মূল্য দিতে হবে। তিনি পাল্টা হামার অঙ্গীকার করেন।
- ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন তাদের অভিযান শেষ হয়েছে। তবে ইরান হুঁশিয়ার দেয় যে, ইসরায়েল যদি পাল্টা জবাব দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে তারা “বিধ্বংসী আক্রমণের” মুখে পড়বে।
- ইসরায়েল সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হেগারি জানান, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সারা রাত মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে শক্তিশালী আক্রমণ চালিয়ে গেছে।
- বুধবার ভোরে ইসরায়েল জানায় তাদের বিমান বাহিনী লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব নিয়ে ইসরায়েল আর ইরানের পাল্টা-পালটি হুমকি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার রাতের দিকে ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
“ইরান আজ রাতে বড় একটা ভুল করেছে এবং সেজন্য তাদের মূল্য দিতে হবে,” তিনি বলেন।
অন্যদিকে ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস বাহিনী (আইআরজিসি) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে ইসরায়েল যদি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেয়, তাহলে ইরান তাদের বিরুদ্ধে “বিধ্বংসী আক্রমণ” চালাবে।
“জাওনিস্ট সরকার যদি ইরানের অভিযানের জবাব দেয়, তাহলে তারা বিধ্বংসী আক্রমণের মুখে পড়বে,” তারা বলে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ইরানের “অভিযান শেষ হয়েছে, যদি না ইসরায়েলি সরকার আরও পাল্টা হামলা নিজেদের কপালে ডেকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।”
রেভোলিউশনারি গার্ডস বাহিনী ইসরায়েলের সমর্থনে তৃতীয় কোন দেশের সরাসরি অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, “এই অঞ্চলে তাদের স্বার্থও শক্তিশালী আক্রমণের মুখে পড়বে।”
ইরান মঙ্গলবার ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ এবং হামাস নেতাদের হত্যার জবাবে ইসরায়েল লক্ষ্য করে এক রাশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার ফলে গোটা ইসরায়েলে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয় এবং লোকজন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়।
ইরান দাবী করছে ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র 'লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে'
ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস বাহিনী (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে দাবী করেছে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের (তাদের ভাষায় ‘অধিকৃত এলাকা’) কৌশলগত সামরিক কেন্দ্রগুলোকে নিশানা করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয় আক্রমণে “কিছু বিমান বাহিনী এবং রেডার ঘাঁটি” এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার কেন্দ্র লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
“এই অভিযানে ষড়যন্ত্র এবং প্রতিরোধের নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে শহিদ ড. ইসমাইল হানিয়েহ এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা শহিদ সাইয়েদ হাসান নাসরাল্লাহ এবং হিজবুল্লাহর সামরিক কমান্ডার আর রেভোলিউশনারি গার্ডস বাহিনীর কমান্ডারদের হত্যা করার পরিকল্পনা কেন্দ্র আঘাত করা হয়,” বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে আইআরজিসি দাবী করে, ঐ এলাকা অত্যাধুনিক এবং ব্যাপক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় থাকা সত্ত্বেও ৯০ শতাংশ ক্ষেপনাস্ত্র তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। “জাওনিস্ট সরকার ইসলামী প্রজাতন্ত্রের গোয়েন্দা এবং কার্যক্ষমতা দেখে ভীত,” বিবৃতিতে বলা হয়।
তবে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরানের নিক্ষেপ করা ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্রর ‘বেশির ভাগ’ তারা ভূপাতিত করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও সীমিত বলে ধারনা করা হচ্ছে।
আইআরজিসি বলে, মঙ্গলবারের আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আত্মরক্ষার অধিকারের ভিত্তিতে করা হয়।
ইরান মঙ্গলবার ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ এবং হামাস নেতাদের হত্যার জবাবে ইসরায়েল লক্ষ্য করে এক রাশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার ফলে গোটা ইসরায়েলে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয় এবং লোকজন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়।
(এই রিপোর্টে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে)
হামাস ইসরায়েলের উপর ইরানের হামলার প্রশংসা করেছে
- By এএফপি
গাজায় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের উপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রশংসা করেছে।
হামাস বলছে, ‘শহিদদের’ হত্যার বদলা নিতে এই আক্রমণ চালানো হয়, যার মধ্যে রয়েছে গত শুক্রবার বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এবং তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ’র মৃত্যু।
“ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন (হামাস) অধিকৃত এলাকার বড় অংশ লক্ষ্য করে ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড বাহিনীর বীরোচিত রকেট নিক্ষেপকে সাধুবাদ জানায়,” হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়।
হামাস যোগ করে যে, আক্রমণ ছিল “আমাদের বীরোচিত শহিদদের রক্তের প্রতিশোধ।”