জাতীয় নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চীন ও তাইওয়ানের নেতারা। তবে তাইওয়ান প্রণালী জুড়ে সক্রিয়তায় তাঁর প্রেসিডেন্ট পদের এই দ্বিতীয় মেয়াদে কি রকম প্রভাব পড়তে পারে সে নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমশই বেড়ে চলেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জোর দিয়েই বলেন যে এই নতুন যুগে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে সঠিক পথ ধরেই চলতে হবে যাতে “উভয় দেশ এবং বৃহত্তর পৃথিবী” লাভবান হতে পারে।
বৃহস্পতিবার চীনের সরকারি সিনহুয়া বার্তা সংস্থার মতে, তিনি আশা করেন, দু পক্ষই “পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক লাভের জন্য সহযোগিতা, সংলাপ ও যোগাযোগকে শক্তিশালী করা, মতপার্থক্যকে যথাযথ ভাবে দূর করা এবং পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতার সম্প্রসারণ তুলে ধরবে”।
এ দিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লায় চিং -তে সামাজিক মাধ্যম এক্স’এ বলেন, তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে “অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দীর্ঘ দিনের সহযোগিতা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি হিসেবে অব্যাহত থাকবে এবং বৃহত্তর সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে”।
চীনের ইন্টারনেটে, কিছু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী বলছেন তারা মনে করেন ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপরে শুল্ক বসাবেন তবে আসন্ন বানিজ্য যুদ্ধ চীনের অর্থনীতিতে কি প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে তারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
তাইওয়ানে কোন কোন তাইওয়ানবাসী ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন কারণ নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তিনি তাই্ওয়ান সম্পর্ক যে মন্তব্য করেছিলেন এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে তার বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাটাই উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
তাইপেতে একজন মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ৩৫ বছর বয়সী লিডিয়িা ইয়াং ভয়েস অফ আমেরিকাকে ফোনে বলেন, “গত কয়েক মাসে তাইওয়ান সম্পর্কে তার মন্তব্য শুনে আমি চিন্তিত যে তারা যদি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চান তা হলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে ততখানি সমর্থন দিবে না”।
জুলাই মাসে ব্লুমসবার্গ বিজনেসউইক পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে ট্রাম্প বলেন প্রতিরক্ষার জন্য তাইওয়ানের উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে মূল্য পরিশোধ করা এবং তিনি তাইওয়ানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর খরচকে বীমা বলে অভিহিত করেন।
তিনি ঐ সাক্ষাতকারে বলেন, “আমি তাদের ভাল করেই জানি। সম্মানও করি। তারা আমাদের চিপ ব্যবসার ১০০% ভাগ নিয়েছে । আমার মনে হয় প্রতিরক্ষার জন্য তাইওয়ানের উচিত আমাদের পয়সা দেওয়া”।
তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে দেশটির সুরক্ষার জন্য অর্থ প্রদানের আহ্বান জানানো ছাড়া্ও ট্রাম্প তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেমি-কন্ডাক্টার প্রযুক্তি চুরি করার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং তাইওয়ানের সেমি-কন্ডাক্টার কোম্পানিগুলির উপর শুল্ক বসাবার হুমকি দেন।
তাইওয়ানের কিছু লোক বলেন এই সব মন্তব্যে পররাষ্ট্রনীতির প্রতি ট্রাম্পের ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবিম্ব রয়েছে এবং এটা বোঝা যায় আগামি জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে গেলে তিনি আমেরিকার স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিবেন।
৪৪ বছর বয়সী একজন প্রকৌশলী লাই মিং -ওয়েই ভয়েস অফ আমেরিকাকে এক সাক্ষাতকারে বলেন, “যুক্তরাষ্টের জন্য সরাসরি লাভজনক নয় এমন বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমার উদ্বিগ্ন হবারই কথা”।
তাইওয়ানের প্রতি নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের নীতি সম্পর্কে ভয়েস অফ আমেরিকা মন্তব্য চাইলে , ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারনা দপ্তর থেকে এখনও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
এই সব উদ্বেগ সত্ত্বেও, তাইওয়ানের কোন কোন কর্মকর্তা জনসাধারণকে এই নিশ্চয়তা প্রদানের চেষ্টা করেছেন যে ট্রাম্পের এই দ্বিতীয় আমলের প্রশাসনে তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিশেষ কোন পরিবর্তন হবে না।
বুধবার তাইওয়ান সংসদের বাইরে তাইওয়ান জাতীয় নিরাপত্তা ব্যুরোর মহাপরিচালক সাই মিং ইয়েন সাংবাদিকদের বলেছেন, “ আমরা মনে করি, তাইওয়ান প্রণালী জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে বাধা দেয়ার তার বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত রাখবে এবং তাইওয়ানের প্রতি বন্ধুসুলভ থাকবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন যদিও যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ান সম্পর্কের মূল বিষয়গুলো অপরিবর্তিত থাকবে , নির্বাচনী প্রচারাভিযানে দেওয়া ট্রাম্পের মন্তব্য এবং আরও বিচ্ছিন্ন থাকার পররাষ্ট্রনীতি দু দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি করতে পারে।
অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন তাইওয়ানকে এমন বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ট্রাাম্পকে বোঝানো যায় যে চীনের তরফ থেকে ক্রবর্ধমান সামরিক চাপের মধ্যে তাইওয়ানের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারটিকে ওই দ্বীপটি গুরুত্ব দিচ্ছে।
তবে কোন কোন চীনা বিশ্লেষক বলছেন যে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা সহ , যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করার তাইওয়ানের প্রচেষ্টার ফল হিতে বিপরীত হতে পারে।
তাইওয়ানের প্রতি ট্রাম্পের সম্ভাব্য নীতি নিয়ে উদ্বেগ সত্ত্বেও , কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন তার প্রশাসন কি ভাবে তাইওয়ান নীতি গঠন করে সেটা এখনও দেখার বিষয়।