পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরত সমর্থকরা মঙ্গলবার শিপিং কনটেইনার দিয়ে তৈরি করা ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীতে ঢুকে পড়ে। সরকার এ ধরনের কার্যক্রমের জবাবে গুলি চালানোর হুমকি দিলেও তা অগ্রাহ্য করে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সহিংসতায় ছয়জনের প্রাণহানি হয়েছে।
ইমরান খানের সমর্থনে আয়োজিত বিক্ষোভে যোগ দিতে অসংখ্য মানুষ রাজধানী ইসলামাবাদের আশেপাশের এলাকাগুলোতে এসে জমায়েত হয়েছেন। অপর দিকে হাজার হাজার নিরাপত্তা কর্মী এই বিক্ষোভ ঠেকাতে ইসলামাবাদের মধ্যাঞ্চলে অবস্থান নিয়েছেন। এই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দী আছেন। তার বিরুদ্ধে ১৫০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা চলছে। তার দল বলছে, এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, একমাত্র আদালতই ইমরানের মুক্তির আদেশ দিতে পারে। ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তার সরকারকে উৎখাত করা হয়েছিল। এরপর ২০২৩ সালের আগস্টে দুর্নীতি মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদের শহরতলীতে অবস্থিত রেড জোনের বড় চত্বর ডি-চকের নিয়ন্ত্রণ নেয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন রয়েছে এবং এ মুহূর্তে পাকিস্তান সফররত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো সেখানেই থাকছেন। আধা সামরিক রেঞ্জার ও পুলিশ বাহিনীর অসংখ্য সদস্য সেখানে রয়েছেন এবং তাদের কেউ কেউ আকাশে সতর্কতাসূচক গুলি ছুঁড়েছে।
এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবি। সরকারের এসব বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও তিনি ও তার গাড়িবহর কড়া প্রহরায় ধীরে ধীরে চত্বরের দিকে এগোচ্ছেন। তাকে ঘিরে রেখেছেন শুভানুধ্যায়ীরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি হুমকি দেন, বিক্ষোভকারীরা তাদের দিকে কোনো ধরনের হামলা চালালে জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী তাজা গুলি চালাবে।
পরবর্তীতে চত্বরে সরেজমিনে পরিদর্শনে করার সম নাকভি বলেন, “আমরা এখন পরিস্থিতি অনুযায়ী যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছি”।
এখন পর্যন্ত পুলিশ শুধু উপস্থিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করেছে। মঙ্গলবার রাতে একটি গাড়ির ধাক্কায় নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্য ও এক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, একটি “অরাজকতা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী” ইচ্ছা করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মীদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে। এই ধাক্কার ঘটনার দায় নেয়নি কোনো গোষ্ঠী। পৃথক এক ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হন।
পাশাপাশি, অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে আছেন সাংবাদিকরাও। তাদের ওপর বিক্ষোভকারীরা চড়াও হন। ইমরান খানের কয়েক ডজন সমর্থক বিক্ষোভের ভিডিও করার সময় এপির এক ভিডিওগ্রাফারকে মারধর করে এবং তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম এই বিক্ষোভের ভিডিও করা ও ছবি ধারণ বন্ধ করে দিয়েছে বললেই চলে। পরিবর্তে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও শহরের ফাঁকা সড়কের দিকে নজর দিচ্ছে।