যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেন লক্ষ্য করে আরেকটি পরীক্ষামূলক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন মনে করে না যে, এই অস্ত্র প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারবে।
রাশিয়া ২১ নভেম্বর ইউক্রেনের দেনিপ্র শহরে প্রথমবার তাদের ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে ইউক্রেনের হামলার জবাব হিসেবে অভিহিত করেন।
“আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ওরেশনিক রণাঙ্গনে যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারবে না। এটা ইউক্রেনে ত্রাস সৃষ্টি করার আরেকটি রুশ প্রচেষ্টা যেটা ব্যর্থ হবে,” যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন। রাশিয়ার কাছ থেকে তাৎক্ষনিক কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
পুতিন এর আগে বলেছিলেন যে, ইউক্রেন যদি দূরপাল্লার পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখণ্ডে আঘাত হানতে থাকে, তাহলে রাশিয়া আবার ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, সম্ভবত কিয়েভের “সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রগুলো” লক্ষ্য করে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, বুধবার সকালে ইউক্রেন রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তাগানরোগে একটি সামরিক বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ছয়টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা এই আক্রমণের জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
রাশিয়া বলে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্রই ভূপাতিত করা হয়েছে তবে ক্ষেপণাস্ত্রর ধ্বংসাবশেষ ভূমিতে পড়ে কয়েকজনকে আহত করেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দাবী করেছেন, ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা অসম্ভব। তিনি বলেন এই ক্ষেপণাস্ত্রর ওয়ারহেডে সাধারণ বিস্ফোরক থাকলেও, তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা পারমাণবিক অস্ত্রের সাথে তুলনা করা যায়।
কিছু পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ওরেশনিকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেটা একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে, যেগুলো একই সময় ভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে – যেটা সাধারণত দূরপাল্লার আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রর থাকে।
তিন সপ্তাহ আগে দেনিপ্রতে ওরেশনিকের আঘাতের দৃশ্য একটি নজরদারি ক্যামেরায় ধরা পড়লে ভিডিওতে দেখা যায়, বিশাল আগুনের কুণ্ডলী অন্ধকার ভেদ করছে এবং অসাধারণ গতিতে মাটিতে আঘাত হানছে।
রাশিয়ার সামরিক স্থাপনায় ইউক্রেনের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুতিন নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বরাই করার জন্য জাতীয় টেলিভিশনে মন্তব্য করেন, যা বেশ বিরল। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রর পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু ইউক্রেনের নেটো মিত্র দেশগুলো হতে পারে, যারা কিয়েভকে তাদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার গভীরে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা এই ক্ষেপণাস্ত্রর কার্যকারিতা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিয়ে বলেন, এগুলোর ধরন হচ্ছে “পরীক্ষামূলক” এবং “রাশিয়ার হাতে সম্ভবত গুটি কয়েক আছে।” তিনি আরও বলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রর বিস্ফোরক ক্ষমতা ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যবহার করা অন্য কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র থেকে কম।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে তারা ইউক্রেনের জন্য আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে রুশ বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছে। আর ছয় সপ্তাহ পর ডনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।
পোল্যান্ডের উদ্যোগ
ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ট্রাম্প সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন তিনি ক্ষমতা নেয়ার আগেই যুদ্ধ বন্ধ করবেন, তবে কীভাবে সেটা করবেন তা তিনি বলেন নি। ইউক্রেন যুদ্ধে জয়লাভ করুক, এই কথা বলতে তিনি অস্বীকার করেছেন, যার ফলে ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত সপ্তাহান্তে প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকির সাথে ট্রাম্পের দেখা হয়েছে।
জেলেন্সকি মঙ্গলবার তার নিয়মিত ভাষণে বলেছেন, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের নেই। “কিন্তু আমাদের মিত্রদের এই অস্ত্র আছে। আমরা বার বার বলেছি, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুদামে না রেখে জীবন বাঁচানোর কাজে ব্যবহার করা উচিত,” তিনি বলেন।
অন্যদিকে, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডনাল্ড টূস্ক মঙ্গলবার বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনা “এই শীতকালে” শুরু হতে পারে। পোল্যান্ড ১ জানুয়ারি থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
শান্তি আলোচনা কবে, কোথায় হবে বা কারা এখানে অংশ নেবেন, এসব কিছু টুস্ক বিস্তারিত বলেন নি। তবে তিনি তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যদের বলেন, তিনি আশা করছেন ইউক্রেনের জন্য শান্তি ইইউ-এর আলোচনার চূড়ান্ত ফলাফল হবে।
এই রিপোর্টের কিছু তথ্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এএফপি এবং রয়টার্স থেকে নেয়া হয়েছে।