যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সোমবার মেক্সিকো এবং কানাডার পণ্যর উপর আরোপ করা ২৫ শতাংশ শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবম এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে ট্রাম্পের আলাপের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবম যুক্তরাষ্ট্রে মারাত্মক মাদক ফেন্টানিল চোরাচালানি আটকাতে সীমান্তে ১০,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সৈন্য মোতায়েন করবেন বলে জানানোর পর ট্রাম্প তাঁর ঘোষণা দেন।
“মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালান, বিশেষ করে ফেন্টানিল, বন্ধ করার লক্ষে মেক্সিকো উত্তর সীমান্তে পাহারা জোরদার করবে,” শেইনবম ট্রাম্পের সাথে কথা বলার পর সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা এক বার্তায় বলেন। “মেক্সিকোতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানি বন্ধু করতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকার করেছে।”
মেক্সিকান নেতা যোগ করেন যে, দু’দেশ নিরাপত্তা এবং বাণিজ্য নিয়ে আলাপ চালিয়ে যাবে এবং “এখন থেকে এক মাসের জন্য শুল্ক আরোপ করা স্থগিত থাকবে।”
ট্রুডো বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সরবরাহ আটকাতে তিনি কানাডার সীমান্তে নতুন প্রযুক্তি এবং লোকবল নিয়োজিত করবেন।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আমার ভাল আলাপ হয়েছে,” ট্রুডো সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন। “আমরা একসাথে কাজ করার সময় প্রস্তাবিত শুল্ক অন্তত ৩০ দিন স্থগিত থাকবে।”
হোয়াইট হাউস থেকে তাৎক্ষনিক কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না। কিন্তু ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন যে ট্রুডোর সাথে টেলিফোনে তাঁর “খুব ভাল” কথা হয়েছে।
শেইনবমের সাথে আলাপের পর ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশাল সামাজিক মাধ্যমে জানান, “এই সৈন্যদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকবে আমাদের দেশে ফেন্টানিল এবং অবৈধ অভিবাসীদের স্রোত বন্ধ করা।”
যুক্তরাষ্ট্রের নেতা বলেন, আগামী মাসগুলোতে এই দুই দেশ একটি “চুক্তি” নিয়ে দর কষাকষি করবে। তিনি জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং বাণিজ্য মন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক উচ্চপদস্থ মেক্সিকান কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন।
কানাডার ট্রুডোর সাথে আলাপ
শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর মধ্যে বিতর্ক অন্তত এক মাসের জন্য ফায়সালা হবার পর ট্রাম্প কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে এক আলাপ করেন। সোমবার মধ্যরাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা কানাডিয়ান পণ্যের উপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। দু’নেতা সোমবার পরের দিকে আবার আলাপ করবেন।
শেইনবম এবং ট্রুডো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দুটি বাণিজ্য পার্টনারের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা এবং চীন ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনার প্রতিবাদ করে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছিল। ট্রাম্প চীনের উপর ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন এবং বেইজিং বলেছে তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ দায়ের করবে।
কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম মিত্রদের অন্যতম, কিন্তু ট্রাম্প সোমবার আগের দিকে সামাজিক মাধ্যমে দেয়া পোষ্টে অভিযোগ করেন, “কানাডা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোকে সেখানে ব্যবসা করতে অনুমতি দেয় না। এসবের মানে কী? এরকম অনেক কিছু আছে, কিন্তু এখানে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইও রয়েছে, এবং মেক্সিকো আর কানাডার সীমান্ত দিয়ে স্রোতের মত প্রবেশ করা মাদকের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে।”
এটা পরিষ্কার না ট্রাম্প কী নিয়ে কথা বলছিলেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো কানাডায় দশকের পর দশক ধরে ব্যবসা করে আসছে।
হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল ইকনোমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হ্যাসনেট সোমবার বলেন যে, শুল্ক নিয়ে এই বিতর্ককে বাণিজ্য যুদ্ধ বলা ভুল হবে, যদিও মেক্সিকো, কানাডা এবং চীন পাল্টা পদক্ষেপের পরিকল্পনা করেছে এবং উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
“নির্বাহী আদেশ পড়ুন যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১০০ ভাগ পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে এটা বাণিজ্য লড়াই না,” হ্যাসনেট বলেন। “এটা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।”
আর্থিক 'কষ্ট'
ট্রাম্প রবিবার স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় তিনটি বাণিজ্য পার্টনারের উপর নতুন শুল্ক আরোপের ফলে আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানী, গাড়ি এবং অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তিনি মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে এটা “ন্যায্য মূল্য” হবে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২১) ট্রাম্প কানাডা এবং মেক্সিকোর সাথে শুল্ক-মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। কিন্তু শনিবার তিনি দু’দেশের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। তিনি চীনের উপর বিদ্যমান শুল্কর সাথে আরও ১০ শতাংশ যোগ করেছেন।
ট্রাম্প দাবী করেন যে, এই তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন এবং মারাত্মক মাদক ফেন্টানিল সরবরাহ আটকাতে যথেষ্ট কাজ করছে না।
সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশালে রবিবার সকালের দিকে ট্রাম্প স্বীকার করেন যে, শুল্কর কারণে আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য জিনিস-পত্রের দাম বেড়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির সময় ফেডেরাল সরকারকে যে শুল্ক দেয়, সেটা তারা দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে হয় আংশিকভাবে নয় পুরোটাই ভোক্তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। তারা বাড়তি শুল্কর খরচ নিজেরা বহন করেনা।
কিন্তু ট্রাম্পের মন্তব্যের লক্ষ্য ছিল মূলত কানাডা, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একটি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সাস ব্যুরো বলছে, গত বছর কানাডার সাথে বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,৫০০ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।
“কেন? এর কোন কারণ নেই,” ট্রাম্প বলেন। “তাদের এমন কিছু নেই যেটা আমাদের দরকার। আমাদের অফুরন্ত জ্বালানি আছে, নিজেদের গাড়ি বানানো উচিত, এবং আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কাঠ আছে।”
“ব্যাপক ভর্তুকি ছাড়া, একটি কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে কানাডার অস্তিত্ব থাকবে না। নির্মম কিন্তু সত্য। কাজেই, কানাডার উচিত আমাদের প্রিয় ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া। অনেক কম আয়কর, এবং কানাডার জনগণের জন্য আরও অনেক ভাল সামরিক নিরাপত্তা – এবং কোন শুল্কও থাকবে না!” ট্রাম্প বলেন।
মঙ্গলবার থেকে শুল্ক কার্যকর
এর আগে হোয়াইট হাউস জানায়, মঙ্গলবার থেকে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ এবং চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শনিবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
"কানাডা এবং মেক্সিকো অবৈধ ফেন্টানিলের নজিরবিহীন অনুপ্রবেশ হতে দিয়েছে যা আমেরিকান নাগরিকদের হত্যা করছে, এবং তারা অবৈধ অভিবাসীদেরও দেশের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে," শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট তার ব্রিফিংয়ে বলেন।