অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ট্রাম্পঃ যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে


গাজার জাবালিয়ায় এক ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের বিধ্বস্ত বাড়িতে খোঁজা-খুঁজি করছেন। ফটোঃ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।
গাজার জাবালিয়ায় এক ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের বিধ্বস্ত বাড়িতে খোঁজা-খুঁজি করছেন। ফটোঃ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, হামাসের সাথে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে। তিনি আরও বলেন, তখন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনার প্রয়োজন হবে না।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী সংকীর্ণ ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানার আহ্বান আগে থেকেই ট্রাম্প জানিয়ে আসছেন। সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই ভূখণ্ডে বসবাসরত ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে “ওই অঞ্চলে নতুন ও আধুনিক বাড়িঘরসহ অনেক বেশি নিরাপদ ও সুন্দর কমিউনিটিতে পুনর্বাসন করা হবে।”

তবে এ দ্বারা তিনি গাজা বা অন্য কোন দেশ, যারা এখনো গাজাবাসীকে গ্রহণ করতে রাজী হয়নি, তাদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন কিনা তা বলেননি।

এদিকে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা দখলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের সকল পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হামাস।

এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প বলেন, তিনি আমেরিকান দখল সহজ করার জন্য গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। তবে তিনি তার নতুন পোস্টে বলেন, ইসরায়েল জমি হস্তান্তরের সাথে সাথে “যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনার প্রয়োজন হবে না! এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে!!”

গাজা সীমান্তে অপেক্ষামান ইসরায়েলি সাঁজোয়া বহর। ফটোঃ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।
গাজা সীমান্তে অপেক্ষামান ইসরায়েলি সাঁজোয়া বহর। ফটোঃ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে এই সপ্তাহের শুরুতে ঘোষিত ট্রাম্পের আকস্মিক গাজা দখলের পরিকল্পনাকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং বিরোধীরা ব্যাপকভাবে আক্রমণ করছে। এদের মধ্যে অনেকেই ইসরায়েলের পাশাপাশি সহাবস্থান করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানও যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান। তবে নেতানিয়াহু এর বিরোধিতা করেন।

পনেরো মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস লড়াইয়ের ধ্বংসযজ্ঞে গাজা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে।

ট্রাম্প তার নতুন বিবৃতিতে বলেন, “সারা বিশ্বের বড় বড় উন্নয়ন দলকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে এবং সতর্কতার সাথে এই কাজ করবে, যা পৃথিবীর এ ধরনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে দর্শনীয় উন্নয়নগুলোর একটিতে পরিণত হবে।”

মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, নতুন করে গড়ে ওঠা গাজা ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ হয়ে উঠবে।

ইসরায়েলের প্রস্তুতি

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বৃহস্পতিবার বলেছেন, বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি যাতে স্থল, জল ও আকাশপথে গাজা ভূখণ্ড ত্যাগ করতে পারে তার নকশা প্রস্তুত করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প গাজার বাসিন্দাদের এই ভূখণ্ড ত্যাগ করতে বলেছেন। কাটজ ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে “সাহসী পরিকল্পনা” বলে অভিহিত করে স্বাগত জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বৃহস্পতিবার বলেছেন, বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি যাতে স্থল, জল ও আকাশপথে গাজা ভূখণ্ড ত্যাগ করতে পারে তার নকশা প্রস্তুত করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরে গাজা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ফটোঃ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরে গাজা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ফটোঃ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প গাজার বাসিন্দাদের এই ভূখণ্ড ত্যাগ করতে বলেছেন। কাটজ ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে “সাহসী পরিকল্পনা” বলে অভিহিত করে স্বাগত জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি স্থল ও বিমান হামলায় গাজা ভূখণ্ড বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার বিকালে ফক্স নিউজকে বলেন, গাজা পুনর্নির্মাণকালে ফিলিস্তিনিরা এই স্থান ত্যাগ করে পরে ফিরে আসতে পারে।

নেতানিয়াহু বলেন, “এটা দারুণ ভাবনা। আমার মনে হয়, এই ভাবনাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাস্তবায়িত করা উচিত কারণ এটা সকলের জন্য আলাদা একটা ভবিষ্যতের জন্ম দেবে।”

প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনার ঝড়

ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে; জাতিসংঘও সরব হয়েছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানি দুজারিক বুধবার সংবাদদাতাদের বলেন, বলপূর্বক যে কোনও রকম বাস্তুচ্যুতি “জাতি নিধনের সমতুল্য।”

জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্ক-ওয়ালটার স্টেইনমার বুধবার বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব “কিছু মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ, এমনকি ভয় সৃষ্টি করছে” এবং এটি “আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।”

২২ সদস্যের আরব লিগ বলেছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা “অস্থিরতা তৈরির একটা উপায়” এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে অগ্রসর করতে এটি সাহায্য করবে না।

কয়েক দশকব্যাপী ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত রুখতে যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সূত্রকে সমর্থন করেছে এবং এ নিয়ে সমঝোতাও করেছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের পর অস্ট্রেলিয়া, চীন, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, সৌদি আরব ও স্পেন বলেছে, তারা এখনও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সূত্রকেই সমর্থন করে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘকে “ফিলিস্তিনি মানুষ ও তাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকারকে রক্ষা” করতে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ট্রাম্প যা করতে চাইছেন তা হবে “আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।”

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বুধবার বলেছেন, ইসরায়েল-অধিকৃত গাজা থেকে মানুষকে বিতাড়ন করা অবৈধ।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

XS
SM
MD
LG