গাজীপুরের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান। একই সঙ্গে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গিয়ে ক্ষমা চান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “শুক্রবার রাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি, একই সঙ্গে ব্যর্থতা স্বীকার করছি।”
“হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না, প্রতিটি হামলার জবাব দেওয়া হবে। এছাড়া যেসব পুলিশ সদস্য রেসপন্স করতে দেরি করেছেন, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শুনেছি, আমার ওসি দুই ঘণ্টা পর আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমি এখানে দাঁড়িয়ে বললাম, তাকে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করব। আমি বলতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেওয়া যাবে না।”
পুলিশ কমিশনার বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে যারা অত্যাচার করেছে, দেশের ওপর জুলুম করেছে, তারা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনো মাথাচাড়া বরদাশত করা হবে না। ইতোমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ রাতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদ দমনে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা করা হবে।”
মোটরসাইকেল থেকে ছোঁড়া গুলিতে এক শিক্ষার্থী আহত
শনিবার কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন। এ সময় মোটরসাইকেল থেকে অতর্কিত গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হন মোবাশ্বের হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, "সন্ধ্যায় শহরের জোর পুকুরপাড়ের দিক থেকে মোটরসাইকেলে এসে এক ব্যক্তি গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে আহতকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার হাতে গুলি লাগলেও তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।"
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই গুলি ছুড়েছে।
কী ঘটেছিল মোজাম্মেল হকের বাড়িতে?
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সকল প্রকার চিহ্ন মুছে দিতে বিভিন্ন স্থাপনা ও নেতা কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর সময়ে হামলার শিকার হয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। পরে তাদের চিকিৎকার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর শহরের দক্ষিণখান এলাকায় ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুর চালাতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুদ্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করে।
হামলার ঘটনা নিশ্চিত করে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, হামলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওসি আরও জানান, ওই ঘটনা সংশ্লিষ্ট আরও তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে পুলিশ। গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শহরের রাজবাড়ী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এতে যোগ দিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।
এদিকে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মারধরে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের খোঁজখবর নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, "ছাত্রদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।"