সাম্প্রতিক উত্তেজনা আর যুদ্ধবিরতির ভঙ্গুর অবস্থা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ের শর্তে শনিবার আরও তিন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের কিব্বুটজ নীর ওজের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী ইসরায়েলি-আমেরিকান সাগুই ডেকেল চেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় বাধা দেওয়ার সময় জিম্মি হন। এর প্রায় দুই মাস পর তার স্ত্রী আভিতাল তাদের তৃতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
এ ছাড়াও ২৯ বছর বয়সী ইসরায়েলি-রুশ নাগরিক সাশা ত্রুফানভকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। হামাসের হামলায় তার মা ইয়েলেনা, দাদি ইরিনা তাতি ও বান্ধবী সাপির কোহেন বন্দি হয়েছিলেন। এক মাস পর জিম্মি বিনিময় চুক্তিতে সেই তিন নারীকে মুক্তি দেওয়া হয়। ওই হামলায় তার বাবা ভিতালি নিহত হন। সাশার পরিবার ২৫ বছর আগে রাশিয়া থেকে ইসরায়েলে পাড়ি জমিয়েছিল।
মুক্তি পাওয়া তৃতীয় জিম্মি হলেন ইসরায়েলি আর্জেন্টিনিয়ান আইয়ার হর্ন (৪৬)। তিনিও কিব্বুটজ নির ওজের বাসিন্দা। হামাসের হামলায় তাকে তার ভাই এইতানের সাথে অপহরণ করা হয়। যদিও এইতান জিম্মি চুক্তির বর্তমান পর্যায়ের অংশ নন ।
ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে নিয়ে যাওয়ার আগে ওই তিন ব্যক্তিকে গাজা ভূখন্ডের খান ইউনিস শহরে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে, মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের বহনকারী প্রথম বাসটি ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে রামাল্লায় উল্লসিত জনতার সাথে মিলিত হয়। হামাস জানিয়েছে, শনিবার প্রায় ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
গত ১৯ জানুয়ারি দুই পক্ষের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ষষ্ঠবারের মতো ফিলিস্তিনি বন্দিদের সাথে ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময়ের ঘটনা ঘটল। হামাস জানিয়েছে, এই ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত দেওয়া হবে।
হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে শুক্রবার তিন জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়ার হুমকি দেয়। ছয় সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে, শত শত ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে মোট ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেবে হামাস।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে এ পর্যন্ত ২১ জন জিম্মি এবং ৭৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি লাভ করেছে।
এক সপ্তাহ আগে মুক্তি পাওয়া তিন জিম্মি বেশ ক্ষীণ অবস্থায় মুক্তি পান। এরপরই অবশিষ্ট জিম্মিদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে ইসরায়েলের।
বৃহস্পতিবার হামাসের মুখপাত্র আবদুল লতিফ আল-কানু ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলবেন। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের “হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের ভাষা” যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে সহায়ক নয়।
পরে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেন, “ শনিবা্র দুপুরের মধ্যে এই তিনজনকে , আমাদের পণবন্দিদের মুক্তি না দিলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল হবে”।
নেতানিয়াহু বলেন, শনিবার আরও বন্দিকে মুক্তি না দিলে আবার লড়াই শুরু হবে।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে হামাস অভিযোগ করেছিল, গাজায় জনগণের ওপর অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে এবং ত্রাণ আটকে দিয়ে ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করছে। তারা বলেছিল ভবিষ্যতে পণবন্দি মুক্তি স্থগিত করা হবে।
এদিকে, জাতিসংঘে ২২ জাতির আরব গ্রুপের রাষ্ট্রদূতরা শুক্রবার ট্রাম্পের গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য গাজা পুনর্গঠন দেখার আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করেন।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান, কুয়েতে নিযুক্ত জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত তারেক আলবানাই জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার প্রস্তাব “১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের ৪৯ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, অধিকৃত অঞ্চল থেকে সুরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে নির্বিশেষে জোরপূর্বক স্থানান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে এতে।”
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্য গাজার পুনর্গঠন দেখতে চায়।
তিনি আরও বলেন, “ফিলিস্তিন ছাড়া আমাদের কোনো মাতৃভূমি নেই। আমরা ফিলিস্তিনকে ভালোবাসি। আমরা গাজা ভূখন্ড পুনর্গঠন করব। আমরা ফিলিস্তিনকে পুনর্গঠন করব।”
ভয়েস অব আমেরিকার নাতাশা মোজগোভায়া এবং মার্গারেট বশির এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন। এপি, এএফপি এবং রয়টার্স থেকে এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।