বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’র নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন নিয়ে টাল-বাহান করছে। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা জাতীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
“ইউনূস সরকার নির্বাচন দিতে গড়িমসি করছে," বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের বলেন।
বিএনপি’র আরেক নেতা, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সময়মত নির্বাচন না দিলে বিএনপি রাজপথে নামতে বাধ্য হতে পারে।
“‘আমার পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ — একটা নির্বাচন আদায় করার জন্য জনগণকে যেন রাস্তায় গুলি খেয়ে মরতে না হয়। আপনারা সময়মতো নির্বাচনটা দেন, তাতে আপনারা ফুলের পাপড়িতে ঢাকা পড়বেন,” রায়কে উদ্ধৃত করে ঢাকার দৈনিক প্রথম আলো জানায়।
রবিবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য রায় অভিযোগ করেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার “টাল-বাহানা” করছে নতুন দল গঠন করার জন্য।
“এটা কি পক্ষপাতদুষ্ট নয়?” রায়কে উদ্ধৃত করে ঢাকার দ্য ডেইলি স্টার জানায়।
একই দিনে ঠাকুরগাঁও জেলায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে নির্বাচনই একমাত্র পথ।
'হাসিনার ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা'
এর আগে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বেইলি রোডে প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "জাতীয় নির্বাচন সবার আগে, তারপরই স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে।”
রিজভী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি “দূরভিসন্ধিমূলক” বলে অভিহিত করেন।
“শেখ হাসিনা ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা নিয়ে ওঁৎ পেতে আছে। দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হবে,” রিজভী বলেন।
রিজভী বলেন, যে গণতন্ত্রের জন্য এত জীবন গেল, সেই গণতন্ত্র ফেরাতে ভোটের জন্য চূড়ান্ত ডেডলাইন দিতে হবে এই সরকারকে।
জাতি এখন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
মির্জা ফখরুল আশা প্রকাশ করেন যে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের জন্য “ঐকমত্য তৈরি হবে” যার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। “এটিই আমাদের প্রত্যাশা,” তিনি বলেন।
ডিসেম্বরে নির্বাচন?
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেদিন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, "অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তারা কাজ করছেন।"
একই দিন, নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নলী কৃষ্ণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে রাজনৈতিক নেতা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সহযোগিতারও আহ্বান জানান।
কমিশনার আরও বলেন, "সবার প্রত্যাশা পূরণের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।"
চলমান নির্বাচনী সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেকোনো পরিবর্তন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা বলেছেন। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন হালনাগাদ করার কারণে প্রায় ১৬ লাখ মৃত ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী কারচুপির সম্ভাবনা দূর করতেই এই পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন এই কমিশনার।