অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

গাজায় ইসরায়েলের লক্ষ্য সমর্থন করে হামাস 'নির্মূল' করার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জেরুজালেমে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। ফটোঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জেরুজালেমে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। ফটোঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।

যুক্তরাষ্ট্র রবিবার গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের লক্ষ্যকে পুরোপুরি অনুমোদন করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, হামাসকে “নির্মূল করতেই হবে” এবং তারা “সামরিক বা প্রশাসনিক শক্তি হিসেবে থাকতে পারবে না।”

রুবিও তার আঞ্চলিক সফরের শুরুতে জেরুজালেমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। গাজায় ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব আর দু’সপ্তাহ পরে শেষ হবে, তবে দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আলোচনা এখনো শুরু হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে তার প্রথম মধ্যপ্রাচ্য সফরে রুবিও নেতানিয়াহুকে বলেন যে, “যতদিন হামাস শাসন করার মত বা তদারকি করার মত বা সহিংসতা ব্যবহার করার হুমকি দেয়ার মত শক্তি থাকবে, শান্তি অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

ধারণা করা হচ্ছে রুবিও গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে ফেলতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে আরব দেশগুলোর কাছ থেকে বিরোধিতার মুখে পড়বেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে ইসরায়েল ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ভূখণ্ড পুনর্নির্মাণের জন্য তার মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং প্রতিপক্ষ ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে, তবে নেতানিয়াহু তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্প এবং তার একটি “অভিন্ন কৌশল” আছে।

A Palestinian man pushes a child on a wheelchair amidst the rubble of buildings destroyed during the Israeli offensive, amid a ceasefire between Israel and Hamas, in Rafah
গাজার দক্ষিণে রাফাহ শহরে বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘরের পাশ দিয়ে একজন ফিলিস্তিনি হুইল চেয়ারে একজন শিশুকে নিয়ে যাচ্ছেন। ফটোঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।

ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে ইসরায়েলি নেতা বলেন, হামাস যদি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অপহরণ করা বাকি কয়েক ডজন জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে “নরকের দরজা খুলে যাবে।”

হামাস, যাদের যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে, শনিবার ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী প্রায় ৪০০ ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে তিনজন জিম্মিকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু তারা এখনো কয়েক ডজন জিম্মিকে আটকে রেখেছে।

দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের ২০২৩ সালের আক্রমণে ১,২০০জন নিহত হয়। ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ৪৮,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যারা সামরিক আর বেসামরিক হতাহতর আলাদা তালিকা তৈরি করে না। ইসরায়েল দাবী করেছে, তারা ১৭,০০০ জঙ্গি হত্যা করেছে। তবে, এর সপক্ষে কোন প্রমাণ দেয়নি।

রুবিও আর নেতানিয়াহুর যখন বৈঠক হয় তখন যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব প্রায় শেষের পথে। দ্বিতীয় পর্বের খসড়া পরিকল্পনায় রয়েছে, আরও ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে বাকি জিম্মিদের মুক্তি, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি তৈরি এবং ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার। কিন্তু চুক্তির বিস্তারিত নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।

নেতানিয়াহুর অবস্থানের সাথে মিল রেখে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান হামাসের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও হামাস অটুট রয়েছে এবং গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে।

গাজার রাফাহ'য় ত্রাণবাহী ট্রাক। ফটোঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।
গাজার রাফাহ'য় ত্রাণবাহী ট্রাক। ফটোঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।

ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর কিছু সমর্থক যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব শেষ হলে যুদ্ধ পুনরায় চালিয়ে যেতে চান। কিন্তু যুদ্ধ আবার শুরু করলে বাকি জিম্মিদের জীবন বিপন্ন হতে পারে।

নেতানিয়াহু হামাসকে আত্মসমর্পণ করার এবং তাদের শীর্ষ নেতাদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু হামাস সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি বিমান হামলা

যুদ্ধবিরতি মোটামুটি বহাল থাকলেও, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে তারা রবিবার দক্ষিণ গাজায় একদল মানুষকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়, যারা তাদের বাহিনীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

হামাস-পরিচালিত অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলায় তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়, যারা মিশর সীমান্তের কাছে রাফাহ’য় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে সহায়তা করছিল।

হামাস এই আক্রমণকে যুদ্ধবিরতির “গুরুতর লঙ্ঘন” বলে বর্ণনা করেছে, এবং অভিযোগ করেছে যে নেতানিয়াহু সমঝোতা নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে।

রুবিও’র আঞ্চলিক সফরে কোন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার সাথে বৈঠকের পরিকল্পনা নাই।

মিশর জানিয়েছে তারা ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি আরব শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করেছে। তারা অন্যান্য দেশের সাথে একটি পাল্টা প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে যেটা ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে না সরিয়ে গাজার পুনর্নির্মাণ সম্ভব করবে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ফিলিস্তিনিদের নির্বাসন সম্ভবত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে।

আরব দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছে, যেটা ইসরায়েলের পাশাপাশি থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রও এই নীতি সমর্থন করেছে। কিন্তু নেতানিয়াহু এই দুই-রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করে এবং গাজার মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রর হাতে তুলে দেয়া হলে, ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার সমাপ্তি হতে পারে।

মিশর হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিরা ব্যাপক সংখ্যায় মিশরে প্রবেশ করলে ইসরায়েলের সাথে তাদের প্রায় অর্ধ-শতকের শান্তি চুক্তি বিপন্ন হবে।

রুবিও সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও সফর করবেন।

(এই রিপোর্টের কিছু অংশ দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস থেকে নেয়া হয়েছে।)

XS
SM
MD
LG