চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই রেকর্ড পরিমাণ ১০ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে কয়েকবার সুযোগ দেয়া হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। তবে এ বছরের ঘটনা সেক্ষেত্রে খুবই ইতিবাচক। সরকারের রাজস্ব বিভাগ জানিয়েছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে শতকরা মাত্র ১০ ভাগ রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কালো টাকা সাদা করার পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক। সরকারসহ যারা এর পক্ষে রয়েছেন, তারা বলছেন, দেশে থাকা বিশাল অঙ্কের কালো টাকা সাদা করা গেলে বিদেশে অবৈধ অর্থ পাচার যেমন কমবে, তেমনি এই অর্থ উন্নয়নের ধারায় যুক্ত হবে। আবার যারা বিপক্ষে রয়েছেন, তারা বলছেন, যারা নিয়মিত বৈধভাবে রাজস্ব দিয়ে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে রাজস্ব হার ৩০ শতাংশের মতো। এক্ষেত্রে মাত্র ১০ শতাংশ রাজস্ব দিয়ে কালো টাকা সাদার মাধ্যমে- নিয়মিত যারা রাজস্ব প্রদান করে থাকেন, তাদের অসম্মান করা হচ্ছে। দুর্নীতি বিরোধী নজরদারি সংস্থা টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক্ষেত্রে বলেন, এর মাধ্যমে বৈধ রাজস্ব প্রদানকারীদের অসম্মান করা এবং নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দেয়া হচ্ছে।
অতীতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ মাঝে মাঝে দেয়া হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাদা করা হয়েছিল মাত্র ৪৫০ কোটি টাকা। আর ১৯৭২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪১ বছরে ১৪ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়। দেশে কত কালো টাকা আছে, তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কালো টাকা বাড়তে বাড়তে এখন মোট জাতীয় আয়ের ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচারের হার দেখলেই কালো টাকার পরিমাণ সম্পর্কে অনুমান করা সম্ভব। জাতিসংঘের সংস্থা আঙ্কটাড, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জিএফআই এবং টিআইবি পৃথক পৃথক গবেষণায় বলছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি ডলার অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১ হাজার কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।