চলমান সহিংসতার মধ্যেই হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। পাশাপাশি সংস্থাটি দাবি করেছে- ঘটনার পূর্ণাঙ্গ, পক্ষপাতহীন এবং স্বচ্ছ তদন্ত। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার কথাও বলেছে।
সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার সময় এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর, মন্দির ও পূজামণ্ডপে দাঙ্গাকারীদের হামলার খবর পাওয়া গেছে। এগুলো দেশের ক্রমবর্ধমান সংখ্যালঘুবিরোধী মনোভাবের লক্ষণ। অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশে বারবার ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে হামলা , সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর এবং উপসানালয়ে হামলা হয়েছে। এতে এটা স্পষ্ট যে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র।
ধর্মীয় স্পর্শকাতরতাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন। সাদ হাম্মাদি বলেন, সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধানে সরকারের অবিলম্বে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে ন্যায় বিচার পান তাও নিশ্চিত করতে হবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল চলমান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছে, ১৩ই অক্টোবর কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭ জন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। এছাড়া ১৭ই অক্টোবর রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ২৫টি বাড়ি ও দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আরও হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। চলমান এই সহিংসতার প্রতিবাদে শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্টাফরা সড়ক অবরোধ করেছেন। দেশজুড়ে সহিংসতা ও ভাঙচুরের কারণে অজ্ঞাতনামা ১০ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৪৬টি মামলা করেছে পুলিশ। এর আগে ২০১৬ সনে ইসলাম অবমাননা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে কুমিল্লার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকশ’ বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সে সময় কয়েক হাজার মানুষের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা করা হয়। ২০১২ সনে বৌদ্ধদের কমপক্ষে ৬টি উপসানালয় ও কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক্ষেত্রেও পবিত্র কোরআন অবমাননার পোস্ট দেয়া হয় ফেসবুকে। এর পরিণতিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার এক টুইট বার্তায় ধর্মীয় সহিংসতার যারা শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বাংলাদেশের সকল বিশ্বাসের মানুষের পাশে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।