অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

লিয়ার লেভিন বললেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা, মক্তির গানের কথা


লিয়ার লেভিন বললেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা, মক্তির গানের কথা
লিয়ার লেভিন বললেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা, মক্তির গানের কথা

লিয়ার লেভিন যে কেবল চলচ্চিত্রের জন্যে ছবি তুলেছেন তাই-ই নয় । বাংলাদেশের প্রকৃতিতে মুগ্ধ এই প্রতিভাবান ব্যক্তি , স্থির চিত্র ও তুলেছেন প্রচুর তবে তারেক মাসুদের সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়া যেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি নির্মাণে এক নতুন অধ্যায় তৈরি করলো। সেই প্রথম সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে লিয়ার লেভিন বললেন :

তিনি বলছেন যে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সঙ্গীতদলের একজন সদস্য মাহমুদুর রহমান বেণু, যিনি ঐ সময়ে আমার ধারণ করা চিত্রের মূল ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি আবার তারেক মাসুদের চাচাতো ভাই তাঁর এবং অন্যান্যদের মাধ্যমে তারেক তাকে নিউ ইয়র্কে খুজে বের করেন এবং ঐ ফুটেজ বেশ কিছুটা তার কথায় ধৃষ্টতার সঙ্গেই ঐ ফুটেজগুলো চান । লিয়ার লেভিন কিছুটা বিস্মিতই হয়েছিলেন , বুঝতে পারেননি কি বলবেন যদিও ঐ ফুটেজ প্রায় কুড়ি বছর ধরে আপার ম্যানহাটানে তার কাছে পড়েই ছিল। তারেকের স্ত্রী ক্যাথেরিন , যিনি একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন , তিনি ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন। আর এরা দু জন রীতিমতো এমনই লেগে রইলেন এ ব্যাপারে যে শেষ পর্যন্ত লিয়ার বললেন , ঠিক আছে আপনারা এটি নিন তবে এটা নিশ্চিত করুন যে আপনারা একটা খুব ভাল ফিল্ম লেবরেট্রিতে এটা প্রসেস করবেন কারণ আমি জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে এই চিত্রায়ন করেছি। ১৬ মি মি এ তোলা এই ছবিটি বস্তুত সুপার সিক্সিটিন পর্যায়ের এবং এর প্রাযৌক্তিক মান ছিল ব্যতিক্রম ধর্মী , তাই এর মান রক্ষা করা এবং ছবিটি যে লিয়ার লেভিনই তুলেছেন সেটা নিশ্চিত করতে তাকে তিনি বলেন তবে এর বিনিময়ে তিনি তার কাছে কিছুই চাননি।

আর তারপর তারেকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন লেভিন। । কথা হলো ক্যাথারিন সম্পাদনা করবেন , তারেক ও থাকবেন তাঁর সঙ্গে এবং ঐ ফুটেজকে কেন্দ্র করে তাঁরা একটি কাহিনী নির্মাণ করলেন যেখানে , যুদ্ধ এবং তার আগের ঘটনায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটলো। তারা তখণ চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করলেন , লেভিনের আশির্বাদ নিয়েই। তার পর তারা মাঝে মাঝে ঐ নির্মীয়মান ছবির অংশ বিশেষ তারেক লেভিনকে দেখাতেন।

লিয়ার লেভিন বলছেন যে ঐ ফুটেজ নিয়ে তারা তো আর কিছু করতে পারেননি , ওগুলোর ওপর কেবল ধূলো জমছিল। তারেক আর ক্যাথারিন যে ঐ ফুটেজ কাজে লাগাতে পেরেছে , সেটা মস্ত বড় কথা এবং সে জন্যে তাদের প্রতি তিনি ধন্যবাদ জানালেন।

কিন্তু এই ছবি নিয়ে কি লিয়ার লেভিনের কোন মূল পরিকল্পনা ক ছিল ?

হ্যা, অবশ্যই । তিনি বললেন যে তারা একদল বাঙালি সঙ্গীত শিল্পিকে নিয়ে ছবি তোলেন এবং তাদের সঙ্গে ট্রাকে করে ঘুরে বেড়ান । তারা অসাধারণ ভাল মানুষ ছিলেন। তখন পরিকল্পনা ছিল , তাদের গানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার আগে তখনকার পুর্ব পাকিস্তানের অবস্থার কথা শোনানো হবে এবং এর সঙ্গে তাদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তান যে সহিংসতা চাপিয়ে দিয়েছিল , তার কথাও বলা হবে।। কাজেই লিয়ার লেভিনের একটা বিশেষ থিম ছিল , মিউজিক শোনার ইচ্ছে ছিল , তাদের কাছ থেকে ঘটনা শোনার ও পরিকল্পনা ছিল।

বাংলাদেশকে নিয়ে এই ধরণের চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ সম্পর্কে লিয়ার লেভিন বললেন ১৯৭০ সালের সাইক্লোনকে কেন্দ্র করেতিনি একটি ছবি তৈরি করেন যার মাধ্যমে ঐ ঘুর্ণিঝড়ে দুর্গত লোকজনের সাহায্যের জন্যে চাঁদা তোলা হয় । এতে তার সঙ্গে তার স্ত্রীও যুক্ত ছিলেন। আমেরিকায় সে একটা সময় যাচ্ছিল যখন মানুষ উদগ্রীব ছিল বিশ্বের অন্য জায়গার মানুষের দুঃখ দুর্দশা মোচনের ব্যাপারে। তেমনি ভাবে তার পরিকল্পনা ছিল এই ছবি তৈরি করে যারা তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিদের বর্বরতার শিকার হয়েছে , তাদের সাহায্য করা। বিশেষত শরনার্থিদের সাহায্যে অর্থ সংগ্রহ করা। তিনি তখন তার কোম্পানি বন্ধ করে কিছু অর্থ নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার শিকার যারা তাদের সাহায্যের লক্ষে। কিন্তু তার ঐ চিত্রায়ন এতটাই বড় হয়েছিল যে ওটা শেষ হতে হতে যুদ্ধই শেষ হয়ে গেল এবং তখন ঐ ছবির প্রতি অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেললো। তিনি ঐ ছবিটির নাম দিয়েছিলেন জয় বাংলা।

বাংলাদেশের প্রকৃতিকে নিয়ে তিনি যে স্থির চিত্র তুলেছেন পরেও , সেকথা বলছিলেন লিয়ার লেভিন তিনি বলেন যে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ। কৃষক মাঠে চাষ করছে , তার ঘামে ভেজা শরীরে , বাহুতে সূর্যের আলো ঢলে পড়ছে কিংবা চাষের বলদ লাঙ্গল টানছে , এ সব দৃশ্য এক অর্থে রোমান্টিক ও বটে। ভাবতে অবাক লাগে যে সে সব দৃশ্যই যুদ্ধে হলো বিক্ষত। অথচ মানুষের সৌন্দর্য , ভুমির ঐশ্বর্য এবং অপর শান্তি এবং পরিবেশ থেকে নেয়া অন্তর্নিহিত শক্তি আর প্রকৃতির দৃশ্যের মধ্যেই যেন সব কিছু ছিল । তিনি বললেন , তার করার তেমন কিছুই ছিল না। প্রকৃতিতে সব উপস্থিত, তিনি শুধু ক্যামেরাটা অন করলেন।

তারেক মাসুদ যে মুক্তির গান ছবিটির উপর ভিত্তি করে এর একটা সিকুয়েল ছবি তৈরি করেছিলেন , মুক্তির কথা্ , সে সম্পর্কে জানতে চাইলে লেভিন বলেন যে মুক্তির কথা ছবিটি তিনি দেখেননি । কিন্তু পরে মুক্তিযুদ্ধের শিল্পিদের সঙ্গে দেখা করা একটি অনুষ্ঠানে তারা বাংলাদেশে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। তারেক, তাকে এবং তার স্ত্রীকে মুড়াপাড়ায় নিয়ে যান। সেখানে মুক্তির গান দেখে তিনি সেখানকার মানুষের চোখে মুখে , তাদের কথায় যে আবেগের সন্ধান পান , সেটা তাকে আবেগ আপ্লুত করেছিল ; এখন ো যেমন আবেগ বিহ্বল তারেকের কথা স্মরণ করে। তারেকের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বাস্পরুদ্ধ হয়ে পড়ে লিয়ার লেভিনের কন্ঠস্বর। তিনি বলেন তিনি কিছুই বলতে পারছেন না। তবে তারেক ছিল তার ছোট র ছোট ভাইয়ের মতো। তার প্রতিভা ছিল অসাধারণ , তার প্রকৃতিতে ছিল সৃজনশীলতা। শ্রদ্ধায়ে বিনম্র , আবেগেবিহ্বল লিয়ার লেভিন বলেন সুযোগ পেলে তিনি হয়ত তারেক মাসুদের কাছেই শিখতেন চলচ্চিত্র নির্মাণ্

XS
SM
MD
LG