বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থান যে কোন কল্পিত সমস্যা নয়,মিডিয়ার কোন আকস্মিক আবিস্কার ও নয়, সে কথা এখন প্রমাণিত সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের জন্যে এই সমস্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে বলছিলেন যুক্তরাস্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির School of Advanced International Studies, এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কর্মসূচির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড ওয়াল্টার এন্ডারসান। তিনি বলেন যে জঙ্গি তৎপরতায় হয়ত বাংলাদেশে সরকারের পতন ঘটবে না তবে বিষয়টি যে ঝুকিপুর্ণ তার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন বাংলাদেশ রাইফেলস এ সংঘটিত বিদ্রোহের সঙ্গে জঙ্গিবাদের সংযোগ থাকতে পারে বলে অনুমান করা হয়। অতীতেও ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বরাবর এমন অনেক গোষ্ঠি সক্রিয় থেকেছে যারা কেবল সীমান্তের ভারতীয় দিকেই ছিল তা নয় , বাংলাদেশের ভেতরে থেকেও কাজ করেছে। তাই এই বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন । তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে অতীতে বেশ কয়েক বছর ধরে এই জঙ্গিবাদের ব্যাপারটাকে অবজ্ঞা করা হয়।
বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর একটি উৎস যে এক শ্রেনীর মাদ্রাসা সে কথা উল্লেখ করে ড ওয়াল্টার এন্ডারসান বলেন সৌদি আরবের পয়সায় গড়া কিছু মাদ্রাসা ও রয়েছে , যারা মৌলবাদি বাণী প্রচার করে। অতএব এই সমস্যাটি অভ্যন্তরীন হলেও এর শেকড় সম্প্রসারিত থাকতে পারে অন্যত্র।
বাংলাদেশে বিশেষত কওমি মাদ্রাসা যে জঙ্গি সংগঠনগুলো লালন করে , সে সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমির প্রাক্তন মহাপরিচালক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন যে বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা সঠিক ইসলামি শিক্ষা নয়।
এই জংগি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে ও নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কি ধরণের সহযোগিতা দিতে পারে , সে সম্পর্কে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ড অ্যান্ডারসান বলেন যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার দিক হচ্ছে গোয়েন্দাগিরি। সে দিকটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে এরই মধ্যে সহযোগিতা চলছে। তা ছাড়া যেহেতু এই সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি আঞ্চলিক ও বটে , সেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার এই সামগ্রিক সমস্যার সমাধানের জন্যে ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে সহযোগিতার প্রয়োজন আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা প্রসঙ্গেঅধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও বলেন যে অতি সম্প্রতিও এ বিষয়ে সেমিনার হয়েছে ঢাকায়।
এই সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি এই কারণে যে বাংলাদেশে উগ্রবাদি তৎপরতা কেবল যে সীমান্ত পেরিয়ে ভারত কিংবা বর্মা থেকে ঘটতে পারে, তাই-ই নয় এই তৎপরতা ঘটতে পারে খোদ বঙ্গপোসাগরের উপকুল ধরেও। বাংলাদেশে দশ ট্রাক অস্ত্র যে পাচার হয়ে এসছিল বঙ্গোপসাগরের পথে সেটি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য। বঙ্গোপসাগরের পথ ধরে যে আন্তর্জাতিক জংগি গোষ্ঠি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে , সে আশংকার কথা উল্লেখ করেছেন , চট্টগ্রামের নৌ সদর দপ্তরের , নৌবাহিনীর গোয়েন্দা দপ্তরের কমোডর মোহাম্মদ আব্দুল আলিম । তিনি তাঁর এক গবেষণা নিবন্ধে লিখেছেন, “ যে সব আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র বঙ্গপসাগরের পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে তাদের মধ্যে রয়েছে আল ক্বায়দা এবং এই গোষ্ঠির সঙ্গে সম্পৃক্ত জঙ্গিরা যেমন জেমাহ ইসলামিয়াহ, লশকরে তৈয়বা এবং আবু সাইফ গ্রুপ। এরা বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে লক্ষ স্থির করে যে কোন ধরণের সন্ত্রাসী হামলা চালাতে সক্ষম আর যেমনটি কমডোর আলিম লিখছেন , এই সমস্যার মোকাবিলা করা কোন একটি দেশের পক্ষে একক ভাবে সম্ভব নয় । সেখানেই আসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রসঙ্গ ।
উগ্রবাদ ও জঙ্গি তৎপরতা যে পথেই আসুক না কেন , প্রশ্নটা হচ্ছে বাংলাদেশে উগ্রবাদ দমন ও মোকাবিলার জন্যে কি ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া যায়? এই প্রশ্নটিই করেছিলাম সিঙ্গাপুরের International Center for Political Violence & Terrorism Research এর অধ্যাপক রোহান গুণরাত্না বলেন যে সবার আগে আমাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে , সেই শিক্ষা যেখানে বোঝানো প্রয়োজন যে ইসলামে কিংবা কোরানে জঙ্গি তৎপরতা কোন ক্রমেই অনুমোদিত নয়। দ্বিতীয়ত আমাদেরকে সঠিক গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে হবে
আইন এবং নির্ভুল আইন প্রয়োগের তৎপরতা চালাতে হবে, বিশেষত ঐ সব উগ্রবাদি গোষ্ঠিগুলোর নের্তবৃন্দকে লক্ষ্য করে এই অভিযান চালাতে হবে এবং তাদেরকে হয় আটক করে পুনর্বাসিত করতে হবে এবং আটক করতে না পারলে, ঐ ধরণের হুমকিকে দমন করতে হবে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে । অধ্যাপক গুণরাত্না আরও বলেন যে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে এ ব্যাপারে সব সময়ে সচেতন থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশে উগ্রবাদের সঙ্গে যে কেবল পুরুষ জঙ্গিরাই জড়িত তা নয়, জঙ্গিদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশ কিছু নারীও যারা জঙ্গি তৎপরতায় লজিস্টিক সমর্থন যুগিয়ে , উগ্রবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই নতুন মাত্রা নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিকের আরেকটি পর্যায়, বাংলাদেশে উগ্রবাদ: নারীর সম্পৃক্ততা , শুনবেন আমাদের সোমবারের সঙ্কলনে আগামী ২৩শে অগাস্ট।