রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধ শত জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমাদের সশ্রদ্ধ নিবেদন। আজ পঞ্চম পর্বে ‘আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ।’
উপস্থাপন করছেন মাসুমা খাতুন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১২ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচবার আমেরিকা আসেন। প্রথম এসেছিলেন ১৯১২ সালের শেষের দিকে। তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ যিনি ইলিনয় রাজ্যের Urbana তে কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন- নিউ ইয়র্ক হয়ে প্রথম তিনি সেখানে যান।
প্রথমবার আমেরিকা আসার আগে রবীন্দ্রনাথ লন্ডনে তাঁর গীতাঞ্জলির ইংরেজী অনুবাদ অর্পন করেন রোদেনস্টাইনের কাছে। ৩০শে জুন তাঁর বাড়ীতে বহু সাহেত্যিকের সভায় গীতাঞ্জলির সেই অনুবাদ আবৃত্তি করলেন ইয়েটস।
রবীন্দ্রনাথ ১৯১২ সালের ২৮শে অক্টোবর নিউইয়র্ক পৌঁছুলেন সঙ্গে ছিলেন তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ এবং পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। সেবারে আমেরিকা থাকলেন ছ’মাস।
১৯১৩ সালের ১৪ই এপ্রিল ইংল্যান্ড ফিরে গলেনে । সেখান থেকে দেশে ফিরে যান এবং ১৩ই নভেম্বর তাঁর নোবেল পুরস্কা পাওয়ার খবর শান্তিনিকেতন গিয়ে পৌঁছয়।
১৯১৬সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বিতীয়বারের মত আমেরিকা এলেন। তখন তিনি নোবেল বিজয়ী। আমেরিকার পচিঁশটি শহরে তিনি বক্তৃতা করেন, যার বেশীর ভাগই বিশ্ব বিদ্যালয় কেন্দ্রিক। তাঁর প্রকাশক Macmillan এর সহযোগী একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠান তাঁর এই বক্তৃতা সফরের ব্যবস্থা করেছিল। একেকটি বক্তৃতার জন্য তিনি ৭০০ থেকে ১০০০ ডলার করে পেতেন। যে অর্থ তিনি নিচ্ছিলেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। অথচ রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যে থাকতো পাশ্চাত্যের বস্তুবাদের বিরুপ সমালোচনা।
তৃতীযবারের মত আমেরিকা এলেন ১৯২০ সালের ২৯শে অক্টোবর। এবারেও ধনী আমেরিকানদের কাছ থেকে তাঁর বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালযের জন্য অর্থ সংগ্রহ উদ্দেশ্য ছিল। নিউইয়র্কের হোটেলে উঠলেন। কোথাও কোন আমন্ত্রন নেই, অভ্যর্থনা নেই। তিনি যে জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বৃটিশ প্রদত্ত নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন তারই প্রতিক্রিয়া। সেযাই হোক একমাসে পাঁচ-ছটি বক্তৃতা দিলেন। হেলেন কেলারের সঙ্গে পরিচয়, লেনার্ড এলমহার্ষ্টের সঙ্গে আলাপ। নিউইয়র্ক থেকে শিকাগো, এবং টেকসাসে গিয়ে কাটালেন দুসপ্তাহ।
১৯৩০ সালে শেষবারের মত আমেরকিা এলেন। তার আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘুরে এসেছেন। ধনকুবের রকেফেলারের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টায় ব্যর্থ হন। এ যাত্রায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট সাতষট্টি দিন আমেরিকা ছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা তাঁর ওপর একুশটি লেখা ছেপেছিল, তার মধ্যে দুটি সাক্ষাত্কার। আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর একটি সুন্দর ছবি ছাপা হয়েছিল
সেবার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান গুলি ছিল, তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট হুভাররে সঙ্গে সাক্ষাত্, নিউইয়র্কে কার্নগেী হলে চার হাজার মানুষের সমাগমে তাঁর ভাষন, শান্তিনিকেতনের জন্য অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছিল একটি ব্রডওয়ে অনুষ্ঠান, এছাড়া রবীন্দ্রনাথেরে আঁকা ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল নিউইয়র্ক এবং বস্টনে।
১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সবশেষ আমেরকিা সফরের সময় নিউ ইয়র্কে তাঁর সম্মানে যে ভোজ সভার আয়োজন করা হয়েছিল তাতে ৫০০ নিমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কের তত্কালীন গভর্নর, পরে যিনি প্রেসিডন্টে হন - Franklin Delano Roosevelt, এবং ঐসময় সাহিত্যে সর্বশেষ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী Sinclair Lewis.
সেবারে এক বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমেরিকার স্বাধীনতা প্রয়াস ও মুক্তচিন্তার প্রশংসা করেন তবে প্রতিচ্যের একই আকাঙ্খা এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তাদের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।