আমেরিকানরা জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে আইওয়াতে তাদের পরবর্তি প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করবে। সেখানে রিপাবলিকানরা ছোট ছোট গ্রুপে সমবেত হবেন এবং তাদের পার্টির ৭জন মনোনয়ন প্রার্থীর একজনকে ভোট দেবেন। জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার নিইউট গিংরিচ, ম্যাসাচ্যুসেট্স রাজ্যের সাবেক গভর্নর মিট রমনির চাইতে এগিয়ে আছেন।
ভয়েস অফ আমেরিকার জিম মেলোন্ ২০১২ সালের নির্বাচনী প্রচার অভিযানের মূল্যায়ন করেছেন তার এক রিপোর্টে।
পড়ে শোনাচ্ছেন শাগুফতা নাসরিন কুইন।
সাম্প্রতিকতম জাতীয় জনমত সমিক্ষায় দেখা যাচ্ছে দুটি রাজ্য যেখানে গোড়ার দিকে প্রাথমিক নির্বাচন হয়, সেখানে নিইউট গিংরিচ অনেক এগিয়ে আছেন। এই দুটি রাজ্য হচ্ছে আইওয়া এবং সাউথ ক্যারোলাইনা।
গিংরিচ বলেন "আপনার প্রতিবেশি ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ইতিহাস তৈরি করার সুযোগ আপনাদের আছে। কারণ বলতে গেলে অমেরিকার প্রায় সকল রাজনৈতিক সংবাদদাতা সেখানে থাকবেন"।
ম্যাসাচ্যুসেট্স রাজ্যের সাবেক গভর্নর মিট রমনির একজন বিকল্প হিসেবে আরও রক্ষনশীল প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন যে রিপাবলিকানরা, গিংরিচ তাদেরই একজন।
রমনি তার প্রচার অভিযানে নিউ হ্যাম্পসারে যে প্রাথমিক নির্বাচন হবে তাতে মনোযোগ দিচ্ছেন। জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে আইওয়া ককাস অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহ পর নিউ হ্যাম্পসারে প্রাথমিক নির্বাচন হবে।
রমনি তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর সেরকম মনোযোগ দিচ্ছেন না বরং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার অর্থনৈতিক রেকর্ডের উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।
রমনি বলেন "প্রেসিডেন্ট ওবামা ভাল মানুষ। কিন্তু আমার মনে হয় তিনি আমেরিকাকে বোঝেন না। আমার মনে হয় না, তিনি আমাদের অর্থনীতি বোঝেন। স্বাধীন জনগনের শক্তি বা তাদের নিজেদের জীবনের পথ স্বাধীন ভাবে বেছে নেওয়ার যে শক্তি তা তিনি বোঝেন বলে আমি মনে করি না"।
জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের সংখ্যা কমে গিয়ে মোটামুটি দুজনের মধ্যেই তা সীমিত হচ্ছে। এরা হলেন রমনি যিনি দীর্ঘদিন ধরে সর্বাগ্রে ছিলেন এবং গিংরিচ যিনি সম্প্রতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যনা কয়েকজন রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী যারা দেখেছেন যে জনমত সমীক্ষায় তাদের জনপ্রিয়তা দ্রুত বেড়েছে এবং তার পর, পড়ে গেছে তাদের মধ্যে আছেন প্রতিনিধি পরিষদে মিনেসোটার কংগ্রেস উম্যান মিশেল বখম্যান, টেক্সাসের গভর্নর রিক পেরি এবং জর্জিয়ার ব্যবসায়ী হারমেন কেইন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক স্টুয়ার্ট রথেনবার্গ বলেন রিপাবলিকানদের নির্বাচনী প্রচার অভিযান খুবই বিশৃঙ্খল।
রথেনবার্গ বলেন "রিপাবলিকানদের এত বিশৃঙ্খল প্রতিদ্বন্দিতা এর আগে আমি কখনও দেখিনি, খুবই অপ্রত্যাশিত। আপনাকে যদি কেউ বলেন তারা অনুমান করছেন এভাবেই তা এগুবে তারা আপনার সঙ্গে তামাশা করছেন"।
চার বছর আগে রমনি যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তখন থেকেই রমনিকে, ২০১২ সালের নির্বাচনে, রিপাবলিকানদের মধ্যে সবচাইতে এগিয়ে আছেন বলে মনে করা হয়।
কিন্তু গিংরিচ যে জনমত সমীক্ষায় এগিয়ে গেছেন, তাতে, রিপাবলিকান দলের মনোনয়নের জন্য জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে বলে মনে হচ্ছে।
এবিসি টেলিভিশনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ম্যাথিউ ডড বলেন রমনির আশা ভেঙ্গে গেছে।
ডড বলেন "মিট রমনির জন্য এটা দুঃসংবাদ। তিনি ভাবতেন মনোনয়ন পাওয়াটা তার জন্য অবশ্যম্ভাবী। সেই আশা আর নেই। জনমত সমীক্ষায় তাই মনে হচ্ছে। খুব দীর্ঘ হবে এই প্রক্রিয়া"।
মিট রমনি রিপাবলিকানদের এটা বোঝাতে পারছেন না যে তিনি সত্যি রক্ষণশীল। মি রথেনবার্গ বলেন:
রথেনবার্গ বলেন "এক দিক থেকে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুবই সুস্পষ্ট। রিপাবলিকান দলের এক চতুর্থাংশ মিট রমনিকে চায়। অন্য ৩ চতুর্থাংশ তাকে চায় না"।
ওদিকে প্রেসিডেন্ট ওবামা ডেমোক্রাটদের উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করছেন। তিনি নিইউ ইয়র্কে এক সমাবেশে বলেন "আমরা পিছপা হচ্ছি না। আমরা আশা ছেড়ে দেব না। আমরা লড়ে যাব। আমরা যে পরিবর্তনে বিশ্বাস করি সেটাই অর্জন করতে চেষ্টা করবো"।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির যে অবস্থা এবং জনমত সমীক্ষায় প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন এত কম হওয়ায় রথেনবার্গ মনে করেন ওবামা তার পুনর্নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন।
রথেনবার্গ বলেন "ভাল সময়ে প্রেসিডেন্টরা কৃতিত্ব পান আর সময় যখন খারাপ থাকে তখন তাদের দোষারোপ করা হয়। ভোটাররা এখনও পরিবর্তন চায়, ঠিক যেমন তারা চেয়েছিলো ২০০৬, ২০০৮ এবং ২০১০ সালে। ওবামা, যারা প্রতিষ্ঠিত, ক্ষমতায় আছেন, তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করেন "।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা ২০১২ সালের নির্বাচনের বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন যখন তারা ভোট দিতে যাবেন ২০১২ সালের ৬ই নভেম্বর।