মঙ্গলবার এক আত্নঘাতী বোমা হামলায় আফগানিস্তানের গাজনী প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর হাজী মোহাম্মদ কাজিম আল্লাহিয়ার-সহ আরও কয়েকজন নিহত হন। গাজনীর প্রাদেশিক পুনর্গঠন টিমের প্রধান স্টেট্সন স্যান্ডার্স ঐদিন কয়েক ঘন্টা আগেই তার সাথে একটি বৈঠক করেছিলেন।
তিনি বলেন, “হাজী মোহাম্মদ কাজিম আল্লাহিয়ার আমাদের সবচেয়ে ভালো শরীকদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি একজন ভালো বন্ধু ও সহকর্মীও ছিলেন।”
২০০৫ সালে তাঁকে গাজনীর ডেপুটি গভর্নরের পদে নিয়োগ করা হয়। তিনি একজন হাজারা, একসময়ের মুজাহিদিন যোদ্ধা, এবং হারকাদিয়া ইসলামীর সদস্যও ছিলেন।
গভর্নর আল্লাহিয়ার যেদিন মারা যান, সেইদিন তিনি গাজনীতে স্টেট্সন স্যান্ডার্স এবং তার টিমের কার্যালয়ে এসেছিলেন ৩ লক্ষ ডলারের একটি কর্মসূচি শুরু করার জন্য যার মাধ্যমে গাজনী এবং আশেপাশের গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সোলার প্যানেল বসানো যাবে।
স্টেট্সন স্যান্ডার্স সেই দিনের কথা মনে করে বলেন, “তিনি আমাদেরকে জানান এই কাজটা কত গুরুত্বপূর্ণ, বিদ্যুৎ গ্রামের মানুষের জন্য কত বেশি দরকার। তিনি এই বিষয়ে উৎসাহিত ছিলেন তাই এত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের কার্যালয়ে এসে এই প্রস্তাবে সাক্ষর দেয়ার জন্য সময় করে নিয়েছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ভালোভাবে আলোচনা করেছি, হাত মিলিয়েছি, তারপর একসাথে একটা ছবিও তুলেছি, যা হয়ত তার জীবনের শেষ ছবি ছিলো।”
এই বৈঠক শেষ করে গভর্নর আল্লাহিয়ার ফিরে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই রাস্তায় আত্নঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারান।
পরের দিন সকালে ফোনের আওয়াজে স্টেট্সন স্যান্ডার্সের ঘুম ভাঙ্গে। আর তাঁকে এই খবর জানানো হয়। তাঁর এখনও বিশ্বাস করতে অসুবিধা হয়, যেই মানুষটিকে তিনি আগের দিনই দেখেছেন, তিনি আজ নেই।
একদিকে মোহাম্মদ কাজিম আল্লাহিয়ারের কুলখানি হয় আর অন্যদিকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এক সমাবেশে তার বক্তব্য দেন যেখানে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি বলেন, এরকম হামলা হতে থাকলে তাঁর দেশের তরুন তরুণীরা দেশের বাইরে চলে যাবে। তিনি চান্না তার সন্তান একজন বিদেশী হয়ে যাক।
তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে স্টেটসন স্যান্ডার্স বলেন, “যেকোন সন্তানের পিতার মত, মিঃ কারজাই-এরও এই অনুভুতি হয়েছে যে জীবন অত্যন্ত ভঙ্গুর, অতি সহজেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তার আজকের বক্তৃতা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় এখানে যা হচ্ছে তা একটা সত্যিকারের সংগ্রাম। আমরা এখানে আছি কারন এখানে সেইসব মানুষও আছে যারা এখানকার শান্তিময় জীবনধারা ধ্বংস করে দিতে চায়।”
তিনি বলেন গভর্নর আল্লাহিয়ারের মৃত্যু এবং প্রেসিডেন্ট কারজাই-এর উদ্বেগ তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয় তাদেরকে এই কাজের সাথে জড়িত থাকতে হবে, এই দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হবে। এই নিয়ে তাঁর কোন সন্দেহ নেই, যে তারা সঠিক কারণেই এখানে আছেন।
তাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধি হিসাবে স্টেট্সন স্যান্ডার আফগানিস্তানে গিয়েছেন। আর তিনি এই দেশের উন্নতি না দেখে ফিরে আসতে রাজী নন।
স্টেট্সন স্যান্ডার্সের সাথে সেহজীন চৌধূরীর পুরো সাক্ষাৎকার এখন ইংরেজিতেও শুনতে পারবেন।
আফগানিস্তানের জন্য পুরো রিপোর্ট পাশতো ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।