আজ থেকে এক দশক আগে এগারোই সেপ্টেম্বরের সেই সন্ত্রাসী হামলার আগে পর্যন্ত , আমেরিকানরা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে খুব কমই জানতো । এখন পরস্পর বিরোধী ধারণা হচ্ছে । কোন কোন লোক যেমন ইসলামকে হুমকি বলে মনে করে অন্যরা তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসরত মুসলমানদের অধিকার সংরক্ষণে পক্ষে জোর বক্তব্য রাখেন। এই যেমন ধরুন টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মারফিসবোরো শহরটির কথা। এটি গাড়িতে ন্যাশভিল থেকে ঘন্টা খানেকের পথ। সেখানে মুসলমানদের একটি মসজিদ নির্মাণের চেষ্টায় বাধা দিচ্ছে , সেখানকার কিছু বাশিন্দা।
পাতায় ছাওয়া এই ঐতিহাসিক শহরে , একটি আদালত ভবনে এ ব্যাপারে শুনানী হচ্ছে । স্থানীয় মুসলমানরা শহরতলিতে একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন যার মধ্যে থাকবে সুইমিং পুল , মসজিদ ও কবরস্থান। এর সমর্থকরা একে গ্রামীন গির্জা ভবনই বলছেন । বিরোধী পক্ষের উকিল আদালতে বলছেন , ভিন্ন কথা ।তার মতে এই ভবনটি জিহাদের অস্ত্রাগারে পরিণত হবে। স্থানীয় বাশিন্দা সুজান কয়নার আদালতের এই কার্যক্রম দেখছিলেন , তিনি বললেন দেখুন আমি ৯/১১ পরে ইসলাম সম্পর্কে যেখানে যেটুকু পেয়েছি পড়া শুরু করেছি । কারণ আমি এটা জানতে আগ্রহী ছিলাম যে এটা কি ধরণের চিন্তাধারা যেখানে মানুষের মন এতখানি ঘৃণায় পূর্ণ যে তারা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করতে চাইবে!
মারফিসবোরোতে এই প্রকল্প মেরুকরণের বিষয় হয়ে ওঠে এবং গুন্ডারা ঐ নির্মাণ প্রকল্পে ভাংচুর করে। সেখানে রয়েছে এক খন্ড জমি মাত্র । এই প্রকল্প সম্পর্কে ইমাম ওসামা বাহলুল বলছেন এই যে একখন্ড জমি এটি এখানকার মানুষের স্বপ্ন যেনবা । আমরা এখানে নামাজের ঘর নির্মাণ করতে চাই , যেটাকে আমরা মসজিদ বলে মনে করবো, তা ছাড়া থাকবে বহুমুখি একটি এলাকা , থাকবে মেয়েদের জন্যে সুইমিং পুলও।
বাহলুল আরও বলেন যে এ ধরণের অভিযোগ যে এখানকার মুসলিম নেতারা সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল সেটা ভুল। তিনি বলছেন যে কাউকে যদি সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করতে দেখা যায় তা হলে তাকে আমরা অবিলম্বে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেবো। তার পরে ও কখনও কখনো মুসলমান ছেলে মেয়েরাও এ প্রথম বারের মতো এক ধরণের এক পেশে মনোভাবের সম্মুখীন হয়। তরুণদের কনসেলার ডিমা বিনাটি , যিনি নিজে অমুসলিম , বলছেন অনেক সময়ে এই ছেলেরা এরকম জিজ্ঞেষ করে , আচ্ছা বলুনতো আমার বন্ধুরা আমাকে কেন সন্ত্রাসী বলে ডাকে কিংবা আমার মায়ের বান্ধবী তার অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় না , কিংবা আমি কেন আমার বন্ধুর বাড়িতে যেতে পারি না ।
এ রকম অজস্র প্রশ্ন জিজ্ঞেষ করে এখানকার মুসলমান ছেলেমেয়েরা কিন্তু পাশাপশি এটাও সত্যি কথা যে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নন , এমন অনেক ভাল মানুষ , মুসলমানদের সাহায্য করছেন । আর কেবল তাই-ই নয় , মুসলমানদের নিজের ধর্ম চর্চার জন্যে গীর্জা খুলে দেওয়া হয় , খুলে দেওয়া হয় ইহুদিদের উপাসনালয় সিনেগগও। এমনি এক মিশ্র অনূভূতি এখানকার মানুষদের , মুসলিম সমাজ সম্পর্কে , এগারোই সেপ্টম্বর পরবর্তী বিশ্বে।