অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ল্যাব চালু না হওয়ায় আটকা পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা


ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

করোনা পরীক্ষায় বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব না থাকায় হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি তাদের কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। এমনকি যারা রিটার্ন টিকিট নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তারাও আটকা পড়েছেন। সংযুক্ত আরব-আমিরাতে যাওয়ার জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার যাত্রী অপেক্ষায় রয়েছেন। সংযুক্ত আরব-আমিরাত শর্ত দিয়েছে, বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা ছাড়া দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ নেই।

গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ল্যাব স্থাপনের নির্দেশ দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, দুই-তিন দিনের মধ্যেই ল্যাব বসে যাবে। কিন্তু ল্যাব স্থাপনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই এখনো। ১৫ সেপ্টেম্বর ৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার বসাতে নির্বাচিত করেছিল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর জমা দেয়। এসব এসওপি যাচাই করতে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে পাঠানো হয়। আরব-আমিরাত এখনো এর কোনো জবাব দেয়নি।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন সরজমিনে পরিস্থিতি দেখতে। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কবে নাগাদ ল্যাব চালু হতে পারে তার কোনো তারিখ তারা দিতে পারেননি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, গত এক সপ্তাহ আগেই চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। মন্ত্রী বলেন, আরব-আমিরাত চেয়েছে বিমানবন্দরে র‍্যাপিড পিসিআর টেস্ট। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে র‍্যাপিড পিসিআর পরীক্ষার যন্ত্রই নেই।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, সাধারণ সময়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ যাত্রী আরব-আমিরাতে গিয়ে থাকেন। বর্তমানে যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট করা যায় না বলে কোনো প্রবাসী সে দেশে যেতে পারছেন না।

বেসরকারি বিমান সংস্থা, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জানান, দুবাইতে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। যাত্রীদেরও চাপ আছে, কিন্তু করোনা পরীক্ষার শর্তের কারণে যাত্রীরা যেতে পারছেন না। ল্যাব স্থাপনের প্রক্রিয়াটি যেভাবে এগুচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে গোটা বিষয়টি সময় সাপেক্ষ।

ওদিকে টিকার সরবরাহ বাড়াতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ২৮ সেপ্টেম্বর জেনেভা যাচ্ছেন। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিনামূল্যে এবং তুলনামূলক কম দামে টিকা পাওয়া নিশ্চিত করতেই মন্ত্রীর এই সফর। তিনি সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে টিকার প্রয়োজন ২৬ কোটি। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে টিকার বড় চালান আসছে। চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান এবং সিনোভ্যাকের কাছ থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। অক্টোবর থেকে টিকা সরবরাহ শুরু হবে। বাংলাদেশ আশা করছে, ডিসেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৮ কোটি ডোজ টিকা এসে পৌঁছাবে।

পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিনামূল্যে ৮ কোটি টিকা পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যেই এর একটি বড় চালান ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে সাড়ে ৭ কোটি ডোজ টিকা কেনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে টিকা পাবার আশা করছে বাংলাদেশ। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মন্দাভিয়া বলেছেন, অক্টোবর থেকে করোনার টিকা রপ্তানি করা শুরু করবে ভারত। এপ্রিল মাসে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে বাংলাদেশও টিকা প্রাপ্তিতে সংকটে পড়ে। বাংলাদেশ তিন কোটি ডোজ টিকা কিনেছিল সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে। ৭০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার পর ভারত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের হার পাঁচ এর নিচে নেমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এটা ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ সময় মারা গেছেন ২৬ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৬২ জন।

XS
SM
MD
LG