অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন দলের সংলাপে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বাধা দেখছে না আওয়ামী লীগ


বঙ্গভবন। (ছবি- মানবজমিন)
বঙ্গভবন। (ছবি- মানবজমিন)

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন তার সাফল্য কামনা করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, এম হাফিজউদ্দিন খানসহ ৩৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক এক যৌথ বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে গণতন্ত্র চর্চা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং জবাবদিহিতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিদাতারা পরমতসহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে উদ্যোগ নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।

ওদিকে বিশিষ্টজনদের এই আহ্বানকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি মূল আলোচনার বিষয় হলেও অন্যান্য বিষয় নিয়ে দলগুলো আলোচনা করতে পারে। এতে বাধার কিছু নেই।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বিশিষ্টজনদের আহ্বানের বিষয়ে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, এটি একটি ভালো আহ্বান। নির্বাচন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরই অংশ। নির্বাচনের সঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জড়িত। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যম হলো নির্বাচন। এসব বিষয় নিয়ে সংলাপে আলোচনা হতেই পারে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, বিশিষ্টজনরা যে আহবান জানিয়েছেন এটি ইতিবাচক। প্রেসিডেন্ট মূলত নির্বাচন কমিশন গঠনে আলোচনার জন্য সংলাপের আহ্বান করেছেন। সেখানে দলগুলো মতামত দেবে। এখানে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে মুখ্য আলোচনা হবে। বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তা বিশ্বের অন্যতম গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। এখানে সবার মতামত দেয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তবে দলগুলো চাইলে নির্বাচন বা অন্য বিষয় নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতেই পারে।

বিশিষ্ট নাগরিকদের তরফে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ যে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যা বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী ও জরুরি বলে আমরা মনে করি। আমরা আনন্দের সাথে লক্ষ্য করছি যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বেশ কিছু মাপকাঠিতে দেশের প্রশংসনীয় সাফল্য এসেছে। তবে মুদ্রার অপর পিঠ, অর্থাৎ নির্বাচন, জবাবদিহিতা, আইনের সমপ্রয়োগ, বাক-স্বাধীনতা, সভা সমিতির অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতন এবং আনুষঙ্গিক অনেক মাপকাঠিতে আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি। বৈষম্যের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মানের ক্রমাবনতি এখন অনস্বীকার্য। এসব ছাড়িয়ে আমাদের উদ্বেগের আরেকটা বড় কারণ হলো আমাদের রাজনীতিতে পরমতসহিষ্ণুতার অবনতি। তিন দশক আগের, ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় প্রণীত তিন রাজনৈতিক জোটের রূপরেখায় যে গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে আমরা ক্রমাগতভাবে পিছনে হেঁটেছি।

বিবৃতিতে তারা বলেন, আশা করি আজকের ক্ষীণ গণতন্ত্রের বাংলাদেশে এখন আবার নতুন করে গণতন্ত্র চর্চা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, জবাবদিহিতা, আইনের সম ও ন্যায্য প্রয়োগ এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সর্বময় ও বণ্টন ব্যবস্থাকে সাম্যমূলক করে তোলার জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ঐকমত্যের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মহামান্য প্রেসিডেন্ট আলাপ-আলোচনা করবেন। আমরা এও আশা করি, এই আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের ব্যাপারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা খসড়া প্রস্তাবনা প্রণীত হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বলাবাহুল্য, এই প্রস্তাবনায় বর্তমানে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের রূপকল্পও স্থান পাবে। আমাদের প্রত্যাশা যে, সেই সাথে মানবাধিকার সংক্রান্ত আমাদের ব্যাপক এবং প্রকট বিচ্যুতি নিরসনের নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলোও রচিত হবে। আমরা আরো আশা করি যে, দলসমূহের মধ্যে ‘তিন জোটের রূপরেখার’ আদতে একটা ঐকমত্য সৃষ্টি হবে। একইসাথে, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে গণমাধ্যম ও নাগরিক সংগঠনগুলোকেও যুক্ত করার জন্য মহামান্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রণীত প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহামান্য প্রেসিডেন্ট সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৫) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মন্ত্রিপরিষদের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করবেন বলেও আমরা আশা করছি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন, বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক পারভীন হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, ফেমা সভাপতি মুনিরা খান, নারীপক্ষের শিরিন হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আলোকচিত্র শিল্পী ড. শহিদুল আলম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, লেখক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন-এর অধ্যাপক ও গবেষক স্বপন আদনান, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোনোয়ার কামাল, ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইন্স সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন এর পরিচালক অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আর্টিকেল ১৯ এর আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, মানবাধিকার কর্মী ড. ফস্টিনা পেরেরা এবং নূর খান লিটন।

XS
SM
MD
LG