অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিশ্বকাপে ভরাডুবির কারণ,বাংলাদেশ দলের প্রিপারেশনটা ঠিক ছিল নাঃ রকিবুল হাসান 


বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান। (ছবি- নঈম নিজাম)
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান। (ছবি- নঈম নিজাম)

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেছেন, এবারের বিশ্বকাপে ভরাডুবির কারণ,আমাদের প্রিপারেশনটা ঠিক ছিল না। ঘরের মাঠ আর বিদেশে খেলা সম্পূর্ণ আলাদা। ক্রিকেটারদের আরও বেশি খেলার ব্যবস্থা করা উচিত বোর্ডের। আগামী দিনের ক্রিকেটকে ঘিরে একটা পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। হারতে হারতে একসময় আমরা জিতে যাব। প্লেয়াররা তৈরি হবেন। ভয়েস অব আমেরিকাকে তিনি এ কথা বলেন। এবার বিশ্বকাপ, বাংলাদেশ দলের সমস্যা ও আগামী দিনের সম্ভাবনা নিয়ে তার সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো।

প্রশ্নঃ এবারকার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

রকিবুল হাসানঃ বিশ্বকাপে টি-টোয়েন্টির যে আদল এতে আমাদের দল পুরোপুরি ধাতস্থ ছিলো না। এটা ক্রিকেটের লেটেস্ট বা সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ। আমরা ওয়ান-ডেতে ভালো খেলি। কিন্তু টি-টোয়েন্টি আমাদের ঘরোয়াভাবে ওভাবে খেলা হয়নি। এটার জন্য স্পেশালিস্ট প্লেয়ার তৈরি হয়নি। আগামীতে হবে আশা করি।

প্রশ্নঃ এই কারণে এত ব্যর্থতা?

উত্তরঃ বিশ্বকাপে আমাদের যে পারফরম্যান্স হয়েছে, কোয়ালিফাইংয়ে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে পরাজয় আমাদের বড় ধাক্কা দিয়েছে। তার পরও সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। পরে সুপার টুয়েলভে দুটি ম্যাচে আমরা জেতার অবস্থায় ছিলাম, শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে। ওভারঅল যদি চিন্তা করি, একটা সময় এসে মনে হয়েছে দলে হতাশা ভর করেছে। এর কারণ হলো, বিশ্বকাপ এমন একটা মঞ্চ যেখানে সবকটি দলের সেরা খেলোয়াড় এখানে যারা আসেন, তারা সেরা খেলাটাই খেলেন। প্রতিটি জাতীয় দলেরই জাতিগত টেম্পারামেন্ট থাকে। আমি যেটা ফিল করি, আমরা আনফিট। ভারত, পাকিস্তান কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ যা-ই বলুন না কেন, ওরা কিন্তু মানসিকভাবে অনেক শক্ত, শারীরিকভাবেও ফিট। আর এই টি-টোয়েন্টি খেলাটা হলো পাওয়ার ক্রিকেট। এখানে পাওয়ার হিটার ব্যাটার লাগে, বেস্ট বোলিং ও ফিল্ডিং লাগে। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের কথাই ধরুন, এই যে নিউজিল্যান্ড জিতল, এ জেতার পেছনে তাদের সম্পূর্ণ স্কিল ছিল। একই সঙ্গে পাওয়ার হিটার ব্যাটারও থাকতে হবে। যেটা এখনো আমাদের বাংলাদেশ দলে নেই। এত বছর পরও আমরা এমন কিছু করতে পারিনি।

প্রশ্নঃ এতে কী হতাশা বাড়বে?

উত্তরঃ এবারের টি-টোয়েন্টিতে যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে তা হয়তো কিছুদিন থাকবে। তবে আমি আশাবাদী। আমরা অবশ্যই এটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। টি-টোয়েন্টি খেলাটা লটারি। আমি মনে করি ওয়ান ডে ফরম্যাটে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেটারদের আরও বেশি খেলার ব্যবস্থা করা উচিত। ছেলেরা মাঠে খেলবে, আমাদের এবারের বিশ্বকাপে যেসব ভুল দেখা গেছে সেসব ওভারকাম করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্নঃ কীভাবে ওভারকাম করবো?

উত্তরঃ দেখুন এবারের ভরাডুবির আরেকটা কারণ, বিশ্বকাপে আমাদের প্রিপারেশনটা ঠিক ছিল না। আমরা যখন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডকে দেশে খেলার জন্য ঘরের মাঠে আনালাম, আমরা কী ক্রিকেট খেললাম! লো উইকেটে। আবার অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যে টিম পাঠাল, সেটাও কিন্তু মূল টিম নয়। আমরা জিতেছি, কিন্তু আমরা রান করতে পারিনি। আমাদের বোলাররা সিরিজগুলো জিতিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের রান হয়নি সিরিজগুলোয়। বল হয়েছে এমন এক কন্ডিশনে, যেখানে বল বাউন্স ছিল, মোটামুটিভাবে বল ব্যাটে আসছে। ১৫০ বা ১৬০ রান করতেই হবে জিততে হলে। সেই প্রিপারেশনটা আমাদের হয়নি। একেক ক্রিকেটে একেক টিম খেলে। এখান থেকেই প্লেয়ারদের তাদের ভুলগুলো ঠিক করে নিতে হবে যেমন সত্য, তেমনি টিম ম্যানেজমেন্ট যেটা আছে সেখানেও একটা ভালো প্ল্যান করতে হবে। আর অবশ্যই সেটা ক্রিকেটের ফরম্যাট বুঝেই।

প্রশ্নঃ এত কিছুর পরও আশার আলো দেখতে পান আপনি?

উত্তরঃ নির্ভর করবে আমরা কিভাবে সামনে যেতে চাই। আগামী পাঁচ বছরে আমরা কোথায় থাকতে চাই? এভাবে প্ল্যান নিয়ে কাজ করলে আমরা এগিয়ে যাবই। আমাদের ক্রিকেটকে সেই প্ল্যান অনুযায়ী সাজাতে হবে। একটা উদাহরণ যদি দিই, দেখবেন একই সমস্যা ছিল ভারতের ক্রিকেট টিমে। আজ থেকে প্রায় সাত-আট বছর আগে। দেশের মাটিতে ভারত সব সময় সিরিজ জিতত, কিন্তু বাইরের মাটিতে তারা হারত। সেখান থেকে তারা বেরিয়ে আসছে এখন। ভারতে সুবিধাটা হলো প্রতিটি প্রদেশে তাদের একটি করে স্টেডিয়াম আছে। আমাদের কিন্তু তা নেই। ভারত নিজেদের উইকেট কন্ডিশনকে বাইরের দেশের উইকেটের মতো করে বানাল। তারা প্রতিটি প্রদেশে আলাদা আলাদা উইকেটের স্টেডিয়াম করল। সেখানে প্লেয়ারদের খেলাতে খেলাতে তারা আজ বিশ্বসেরা। এখন ভারতের টিমে এক ঝাঁক ফাস্ট বোলার। কাকে রেখে কাকে নেবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। এবং যে খেলার সুযোগ পায় সে তার সেরাটা দিয়ে আসার চেষ্টা করে। ভারতের টিম অস্ট্রেলিয়া গিয়েও সিরিজ জিতে এলো।

আমাদেরও তেমন একটি প্ল্যান নিয়ে কাজ করতে হবে। শাক দিয়ে মাছ ঢেকে লাভ নেই। স্লো উইকেটে খেলব আর স্বপ্ন দেখব বড়। এভাবে আমরা খুব একটা এগোতে পারব না। সেই জায়গায় নজর দিতে হবে ক্রিকেট বোর্ডকে, বোর্ডের কর্মকর্তাদের। একটা কমিটি বানিয়ে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রথম দিকে হারতে হবে। তবে হারতে হারতে একসময় আমরা জিতে যাব। প্লেয়াররা রেডি হবেন। তারা বুঝতে পারবেন এমন উইকেটে কী হতে পারে! যেমন আমাদের প্লেয়াররা স্কয়ার কাট, বাউন্সার শটগুলো খেলতে পারেন না। কারণ, দেশের মাটিতে যখন খেলেন তখন এমন বাউন্সার আসে না, শট বল আসে না, স্কয়ার কাট খেলার সুযোগ কম। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল উইকেটে খেলতে গেলে এমন বিষয়গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের শটগুলো থেকেই রান করতে হবে। আমি মনে করি, যারা বোর্ডের কর্মকর্তা তারা চেষ্টা করছেন, কিন্তু দে শুড বি হাই পাওয়ার টেকনিক্যাল কমিটি। একটা ন্যাশনাল টেকনিক্যাল কমিটি করা উচিত। বোর্ড সিলেকশন থেকে শুরু করে কেমন খেলা হবে তারা নির্ধারণ করবেন। এক পিচে প্রতিদিন খেলাবেন তা হবে না।

XS
SM
MD
LG