বাংলাদেশে ন’মাস আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছিল। আর এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল রাজধানী ঢাকায় বাস চাপায় দু’জন শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে।
হাজার হাজার ছাত্র তখন রাজপথে নেমে এসেছিল। সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল সাধারণ ছাত্ররা। বেহাল সড়কে কিছুটা স্থিতিও এসেছিল। এই সময় সরকার পড়েছিল নানা চাপে। ছাত্ররা তখন ৯ দফা দাবি দিয়েছিল। সরকার তা পূরণে অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ৯ মাস পর এই দাবিগুলো আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। কারণ ৯টির মধ্যে পূরণ হয়েছে মাত্র ২টি। বাকি দাবিগুলো কেন পূরণ হয়নি তার কোন যৌক্তিক কারণ বলছেন না কেউ। এবার একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যুতে ফের ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ছাত্ররা ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে। বলেছে, যদি ২৮শে মার্চের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হয় তাহলে তারা রাজপথে সমাধান খুঁজবে। বৃহস্পতিবারও বেশ কিছু শিক্ষার্থী প্রগতি স্মরণীতে মানববন্ধন করেছে।
বাংলাদেশের সড়ক এখন রীতিমতো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায় সড়কে। এর জন্য কাউকে কোন কৈফিয়ত দিতে হয় না। পরিবহন খাত অনিয়ন্ত্রিত এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। সার্টিফিকেট ছাড়াই চলাচল করে হাজার হাজার যানবাহন। যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার কয়েকটি কারণ খুঁজে বের করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে গাড়ি চালনা।
সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশেরই কারণ হচ্ছে চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও গতি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কেবলমাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে প্রতি বছর ক্ষতি হয় মোট জিডিপি'র ১ দশমিক ৬ ভাগ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বিশ্বের ১৯২টি দেশের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯০তম। এবার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ৮ দফা দাবির মধ্যে নতুন কোন দাবি নেই। তবে যে দাবির প্রতি তাদের মনোযোগ বেশি তা হচ্ছে সড়ক হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ আইনের আওতায় আনতে হবে। পরিবহন খাতকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার দাবিও রয়েছে।