অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্র- আসিয়ান কৌশলগত সহযোগীতাকে সম্প্রসারিত করছেন বাইডেন


আসিয়ান ভার্চুয়াল সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন
(এপি)
আসিয়ান ভার্চুয়াল সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন (এপি)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার দক্ষিণ পূর্ব -এশীয় রাষ্ট্রসমূহের সংগঠন আসিয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন করে ঝালাই করেছেন। তিনি ভার্চুয়ালি এই ১০ সদস্য বিশিষ্ট সংগঠনের বার্ষিক বৈঠকে যোগ দেন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঐ ব্লককে ১০ কোটি ২০ লক্ষ ডলার প্রদানের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।

হোয়াইট হাউজ থেকে দেওয়া তাঁর উদ্বোধনী মন্তব্যে বাইডেন বলেন, “একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমাদের অংশীদারিত্বের প্রয়োজন আছে । এটিই কয়েক দশক ধরে আমাদের অভিন্ন নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির ভিত নির্মাণ করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক ও নিয়ম নির্ভর আঞ্চলিক শৃঙ্খলার জন্য আসিয়ান এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্ত ভাবে সমর্থন করে”। ১০ টি সদস্য রাষ্ট্রে মধ্যে নয়টি রাষ্ট্রের নেতারা তাঁর ভাষণ শুনছিলেন।

ডনাল্ড ট্রাম্পই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে শেষ প্রেসিডেন্ট যিনি ২০১৭ সালে ম্যানিলায় আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে যোগ দেন।

এ বছরের এই শীর্ষ বৈঠকের আয়োজক হচ্ছে ব্রুনেই। এই সংগঠনের অন্যান্য মূল সদস্য-রাষ্ট্র হচ্ছে ক্যাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া , মালায়েশিয়া , ফিলিপাইন , সিঙ্গাপুর , থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।

মিয়ানমারকে এই সম্মেলনে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। ছ’ মাস আগে যে শান্তির রূপরেখা সম্পর্কে তারা সম্মত হয়েছিল সেটি অবজ্ঞা করার জন্য এই সংগঠন সামরিক জান্তার নেতাদের সম্মেলনে যোগদান নিষিদ্ধ করে।

বাইডেন আসিয়ানের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এই সম্পর্ককে তিনি,“ আমাদের এই অভিন্ন অঞ্চলকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখার, এর সমৃদ্ধি ও সুরক্ষা প্রদানের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে অভিহিত করেন”।

হোয়াইট হাউজ বলেছে এই নতুন অর্থায়ন স্বাস্থ্য, জলবায়ু, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগত কর্মসূচীর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।

গত চার বছরে এই প্রথম একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এই শীর্ষ বৈঠকে অংশ গ্রহণ করলেন । অর্থনৈতিক ভাবে গতিশীল এই আঞ্চলিক ব্লককে . ক্রমবর্ধমান ভাবে আধিপত্যবাদী চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মূল চাবিকাঠি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান বিজনেস কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মাইক মিলি বলেন তিনি বাইডেনের এই সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানাচ্ছেন । তিনি বলেন, “ আমরা এমন একটি অঞ্চল সম্পর্কে কথা বলছি যা ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে যদিও ঐ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্খার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা নিশ্চয়তকারি হিসেবে দেখা হচ্ছে , অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন বেঈজিং’এর চেয়ে পিছিয়ে আছে। আসিয়ানের উপাত্ত অনুযায়ী২০২০ সালে এই ব্লকটি চীনের বৃহত্তম বানিজ্যিক অংশীদার হয়ে ওঠে।

আসিয়ান এবং চীন বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বানিজ্য চুক্তি, ‘রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশীপ’এরও অংশ। যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির অংশ নয়। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতির ৩০% রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রোগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স -প্যাসিফিক পার্টনারশীপেরও বাইরে রয়েছে। এই মুক্ত বানিজ্য বিষয়ক চুক্তি যা আগে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশীপ (টিপিপি) নামেও পরিচিত ছিল, সেটিতে ২০১৬ সালে প্রণোদনা জুগিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিন্তু ২০১৭ সালে ট্রাম্প ঐ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন।

উইলসন সেন্টারের এশিয়া কর্মসূচীর ফেলো প্রশান্ত পরমেশ্বরণ বলেন, “ বিভিন্ন বিষয়, তা বানিজ্যই হোক কিংবা জলবায়ু যুক্তরাষ্ট্র কার্যসূচীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তার পর কখন‌ও কখনও সেই কর্মসূচী থেকে বেরিয়ে আসে”।

তিনি বলেন ভৌগলিক দিক দিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান খুব সুবিধাজনক নয় এবং আসিয়ানের সমর্থন লাভের জন্য কঠিন ভাবে কাজ করতে হবে এবং একই সঙ্গে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর ও সমর্থন পেতে হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈরিতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । বাইডেন প্রশাসন ঐ অঞ্চলে মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অবলম্বন অব্যাহত রেখেছেন যা বেইজিংকে আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েমের জন্য দায়ি করছে।

তবে আসিয়ানের অধিকাংশ সদস্যই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করেন না । তারা উভয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করাকে সমর্থন করেন । আর সেই সঙ্গে তা্‌ইওয়ান প্রণালীসহ জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে চান।

[এই প্রতিবেদনে ইভা মাজরিয়েভা এবং ভার্জিনিয়া গুনাওয়ানের পাঠানো তথ্য রয়েছে]

XS
SM
MD
LG