তাঁর সানাইয়ে মিয়াঁ কি টোড়ি রাগের মূর্ছনা কতকাল আগে থেমে গিয়েছে, কিন্তু এখনও বেনারসের গলিতে গলিতে কান পাতলে যেন শোনা যায় উস্তাদ বিসমিল্লাহ্ খান সাহেবের সানাইয়ের সুর। আজ ২১শে অগাস্ট তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী। বস্তুত বেনারস বা কাশী বললেই বিশ্বনাথের মন্দির, গঙ্গার ঘাট, আর সেইসঙ্গে বিসমিল্লাহ্ খান সাহেবের নাম মনে পড়তে বাধ্য। বিহারে জন্ম, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তিনি বেনারসে এবং সেখানেই ঘর করে তাঁর সঙ্গীত সাধনা, সানাইয়ের রেয়াজ চালিয়ে গিয়েছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। সেই ঘরটিকে তিনি মন্দির মনে করতেন। উস্তাদ আলি আকবর খানের মতোই বিসমিল্লাহ্ খানও ছিলেন জ্ঞানের দেবী স্বরস্বতীর উপাসক। তাঁর ভক্তরা তাঁকে আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উনি সেই মন্দির ছেড়ে পাকাপাকিভাবে কখনোই যেতে রাজি হননি।
অল্পবয়েসে কাশীর এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে ঘুরে ঘুরে সানাই বাজানোর ডাক পেতেন তিনি। সেই সময়টাই ছিল অন্য রকম। কখনও তাঁকে দেখা যেত গঙ্গার বুকে নৌকো করে সানাই বাজাতে বাজাতে চলেছেন আপন খেয়ালে। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাত্রা, গাড়ি কেনেননি, সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াতেন। তবে তাঁর গুণের মর্যাদা কিন্তু পেয়েছেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট ভারত স্বাধীন হলো। রাজধানী দিল্লিতে লালকেল্লায় তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলনের ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমন্ত্রণে সানাই বাজিয়েছিলেন বিসমিল্লাহ্। ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মভূষণ এবং সর্বোচ্চ সম্মান ভারত রত্ন উপাধিতে ভূষিত করেছে। সেই বিসমিল্লাহ্ খানের বাড়ি এই মুহূর্তে হাতুড়ির ঘায়ে ভেঙে পড়ার মুখে। তাঁর সেই প্রিয় সুর সাধনার ঘরটির দেয়াল ও ছাদ ইতিমধ্যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। খান সাহেবের পরিবারেরই একাংশ বাড়ি ভেঙে শপিং মল করার কথা ভেবেছে। আর একটি অংশ অবশ্য এর বিরোধী। তাঁরা এবং ভারতের প্রতিটি সঙ্গীতপ্রেমী চাইছেন, সরকার ওই বাড়ি অধিগ্রহণ করে সংগ্রহশালায় পরিণত করুক। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার তাতে কান দেয়নি। এই নিয়ে কী ভাবছেন এদেশের সঙ্গীতপ্রেমীরা? পণ্ডিত অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভারতের সব সঙ্গীতপ্রেমী একমত। তাঁরা চান উস্তাদ বিসমিল্লাহ্ খান সাহেবের বাড়িটি ঠিকঠাক করে সংগ্রহশালায় পরিণত হোক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সেটা বড় প্রয়োজন।