নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম জঙ্গী গোষ্ঠির সঙ্গে সংঘাতে গত ৭ বছরে ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। সন্ত্রাসী দলটি চিবকের কয়েকশ স্কুল ছাত্রী অপহরণ করে ব্যাপক পরিচিতি পায়। গুপ্ত বাহিনী হিসাবেও বোকো হারাম পরিচিত। ভয়েস অব আমেরিকা বোকো হারামের তৈরী প্রচুর গোপন ভিডিও পেয়েছে যাতে নিরস্ত্র নাইজেরিয়ানদের প্রতি বোকো হারামের নৃশংসতা ও বর্বরতার চিত্র ফুটে উঠেছে। দেখানো হয়েছে বোকো হারাম নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার ফাসি, নির্যাতনসহ নানা নিষ্ঠুরতা।
নাইজেরিয়ার বোর্নো রাজ্যের কুমশের এক ছোট্ট গ্রামের দৃশ্য এই ভিডিও চিত্রে। এই ভিডিও আগে কেউ দেখেনি। এতে দেখা যাচ্ছে গ্রামবাসীদেরকে জোরপূর্বক ধরে প্রহার করা হচ্ছে। বোকো হারামের সদস্যরা তাদেরকে হত্যা করছে ইসলামের বিকৃত ব্যাখা অনুসরণ করে।
ভয়েস অব আমেরিকার কাছে এই ১৮ ঘন্টার গোপন ভিডিও এসেছে। সাত বছরেরও বেশী সময় ধরে নাইজেরিয়ার বিভিন্ন স্থানে বোকো হারামের নৃশংসতার চিত্র রয়েছে এতে। এই ভিডিওটিতে যেমন ট্রাইবুনাল করে নির্যাতন করা হচ্ছে।
ট্রাইবুনাল হচ্ছে একটি উপায় যার মাধ্যমে জোর করে দেখানো হয় নির্যাতনের ধরণ।
একজন বিচারক নীচু হয়ে আছেন। তিনি তিনজন লোককে মাদক পাচারের দায়ে বোকো হারামের কাছে দোষ স্বীকার করার জন্য চাপ দিচ্ছেন- এবং মৃত্যুদন্ড দিচ্ছেন।
গাম্বো আব্বা নামের প্রথম লোকটি তা অস্বীকার করেছে। সমবেত জনতা বলছে ‘সৃষ্টিকর্তা মহান’। সকলেই সমস্বরে বলবে তা নইলে তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে অভিযুক্ত হওয়ার আশংকা থাকবে।
সকলেই দোষ স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে তাদের হাত বাধা হবে এবং মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। অন্য যারা মাদক নেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে; বিচারক বলছেন; আবারো যদি এই অভিযোগ তাদের নামে ওঠে তবে তাদরকেও মেরে ফেলা হবে। আজ তাদের শাস্তি হিসাবে প্রহার করা গবে।
প্রথম বন্দীকে নাম ধরে ডাকা হল। এরপর তাকে বেত্রাঘাত করা হলো। প্রত্যেক বেত্রাঘাতের সঙ্গে বলা হচ্ছে ‘সৃষ্টিকর্তা মহান’।
একজন বৃদ্ধ লোককে ডাকা হলো। খালি পা, ছেড়ে পোষাক।
এক বালককে ডাকা হয়। কুশমের একজন লোককে ডেকে তাকে প্রহার করতে বলা হয়।
যখন তা শেষ হলো; তিনি বোকো হারামের ব্যানারের প্রতি মাথা নোয়ালেন। প্রহার চললো ৩০ মিনিটেরও বেশী সময় ধরে। এরপর তাদেরকে পাশে সরিয়ে রাখা হলো দোয়া পড়ানো হলো।
বোকো হারামের আমীর গাম্বো আব্বার হাত বাঁধলো। মাটিতে শুয়ে সে তার আকাশের দিকে তাক করে প্রার্থনা করলো। এটি একটি শেষ প্রার্থনা যা বহু মুসলমান মৃত্যুর আগে করেন যার মধ্যে দিয়ে মনে করা হয় তার জন্যে বেহেশতের দরজা খোলা হবে।
পেছন থেকে একে-৪৭ রাইফেল হাতে একজন এসে তার বুকের হৃদপিন্ড বরাবর অস্ত্রটি তাক করলো।
পরবর্তী বন্দী ধীরস্থিরভাবে এসে তার মৃত্যুর জন্য নির্ধারিত করা স্থানটিতে দাঁড়ালো। সে মৃত মানুষটির পাশে শুয়ে পড়লো এবং তার দিকে তাকালো।
ভিডিওগ্রাফারের শব্দ শোনা যাচ্ছে, সে বলছে ‘সৃষ্টিকর্তা মহান’। শেষ বন্দী যখন মাটিতে শুয়ে পড়লো, তৃতীয় শুটার এসে দুটি গুলি করলো।
মৃতদেহগুলোর পেছনে বোকো হারাম সদস্যরা হাটু গেড়ে মাটিতে চুম্বন করছে। বোকো হারামের আইনে কোনো সন্দেহ নেই।
মৃত্যুদন্ড কার্যকর কারী একজন বোকো হারাম সদস্য জনতার উদ্দেশ্যে বলছে, “আমরা খোদার আইনেরই প্রতিনিধিত্ব করছি”। সে বলতে লাগলো; “এখানে উপস্থিত সকল মানুষ তারাই যারা দুরিয়ায় অপরাধ করেছে। শুধু দুনিয়ায় নয়, ইসলামিক রাজ্যে তারা অপরাধ করেছে”।
ভিডিও ধারণের সময় হিসাব করলে দেখা যায় ঐসব হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালের শেষের দিকে। ঐ সময়টিতেই বোকো হারাম কুশমের নিয়ন্ত্রন নেয়। আগের বছর নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনী কুশমে ও উত্তর পূর্বের আশেপাশের গ্রামগুলোর দখল পূন:প্রতিষ্ঠা করছিল।
বোকো হারাম এখনো গ্রামাঞ্চলে অবস্থান করে। সাত বছরেরর সংঘাতের পর প্রায় ২০ লক্ষ নাইজেরিয়ান গৃহচ্যুত হয়েছে। বোর্নো রাজ্যে ৫ লক্ষের মতো মানুষ আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে। তাদের নেই পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও চিকিৎসার ব্যাবস্থা।
কুশমের এক শরনার্থী জানায় ঐ ট্রাইবুনাল বা বিচার হয়েছিল তার গ্রামেই। ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে দেয়া সাক্ষাৎকারে সে বলেছে মাদক ব্যাবহার, গুপ্তচরবৃত্তি ও বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে বোকো হারাম বহু মানুষের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে তার গ্রামে।
বোকো হারামের ভিডিও থেকে ঐ গ্রামের স্থিরচিত্র করা হয়।
বোকো হারামের ভয় মানুষের মাঝ থেকে অতি সহজে বা অল্প সময় যাবে না। বোকো হারাম নিয়ে পরের পর্বে থাকছে- ‘বোকো হারামের এক হামলার ঘটনা’।