অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ক্যামেরুনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় দায়ীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ


ক্যামেরুনের সওজায় একটি স্কুলের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীরা। ১লা ডিসেম্বর, ২০২১।
ক্যামেরুনের সওজায় একটি স্কুলের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীরা। ১লা ডিসেম্বর, ২০২১।

একটি অধিকার গোষ্ঠীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম ক্যামেরুনে একটি ইংরেজি-ভাষী রাষ্ট্র গঠনের জন্য লড়াইরত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্কুলে হামলা চালায়, শিশুদের যোদ্ধা হিসাবে প্রশিক্ষণ দেয় এবং এর ফলে সেখানে ২০১৭ সাল থেকে অন্তত ৭ লক্ষ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, সরকারি সেনারা আপত্তিজনক পাল্টা বিদ্রোহ সংগঠিত করেছে, যা শিক্ষাকে বিপর্যস্ত করেছে। হাজার হাজার শিশু যারা ইংরেজিভাষী অঞ্চল থেকে পালিয়ে গেছে, তাদের স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

একুশ বছর বয়সী কিংসলে উইরবা ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউন্ডে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বে বলে, তার মোটরসাইকেল ট্যাক্সির ইঞ্জিন গরম করছিল। উইরবা সেসময় বলেন, তার শিক্ষা লাভের আশা ভেঙ্গে যায় যখন ২০১৭ সালে ইংরেজিভাষী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুম্বোতে আম্বা যোদ্ধা নামক বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তার স্কুলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

উইরবা বলেন, “এই আম্বা যোদ্ধাদের মধ্যে কেউ কেউ এসে স্কুলে আক্রমণ করবে, আমাদের শিক্ষকদের হুমকি দেবে, তোমাকে মারবে”। “একদিন আমরা স্কুলে গিয়ে দেখি, যোদ্ধারা এসে স্কুলের একটি অংশ আক্রমণ করেছে এবং তারা এটি পুড়িয়ে দিলো। ফলে সেখানে আমাদের স্কুল চালিয়ে যাওয়ার আর কোন উপায় ছিল না। আমি একা স্কুল ছাড়িনি। শত শত শিক্ষার্থী চলে গেছে। এমনকি শিক্ষকরাও পালিয়ে গেছেন”।

উইরবা জানান, ২০১৭ সালে কুম্বোতে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সরকারি সেনাদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের সময় তার বাবা নিহত হন। তিনি বলেন, ইয়াউন্ডেতে নিজের এবং তার ছোট বোনের দেখভাল করার জন্য প্রতিদিন তাকে একটি মোটরসাইকেল ট্যাক্সি চালাতে হয়।

স্টেলা মন্যুই নামের আঠারো বছর বয়সী অপর এক ছাত্রী বলেন, তিনিও ২০১৭ সালে কুম্বো থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। মন্যুই বলেন, কুম্বোতে অন্যান্য ২০০ স্কুলের বাচ্চাদের সাথে অপহরণের পর, তার বাবা-মা তাকে শিক্ষার জন্য ইয়াউন্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

মন্যুই বলেন, “একদিন আম্বা ছেলেরা এসে আমাদের সবাইকে তাদের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়। আমরা তাদের নির্দেশ মতো প্রায় ১৩ কিলোমিটার ঝোপের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাই। তখন আমাদের কাছে খাওয়ার মতো কিছুই ছিল না, এমনকি পানীয় জলও না।তিনি আরও বলেন, “পরে আমাদের বাবা-মা অর্থের বিনিময়ে আমাদের উদ্ধার করেন। আমরা মুক্তি পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু ঝোপের মধ্যে ওরা আমাদের অনেক নির্যাতন করেছিল”।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে বলছে, শিক্ষার ওপর হামলা ক্যামেরুনের অ্যাংলোফোন অঞ্চলে সংকটের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো অ্যাংলোফোন অঞ্চলে শত শত ছাত্র ও শিক্ষককে হত্যা, মারধর, অপহরণ ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছে। এইচআরডব্লিউ বলছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্কুল ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে, স্কুলগুলোকে তাদের ঘাঁটি ও ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করার জন্য এবং নির্যাতন চালানো ও মানুষকে জিম্মি করার জন্য।

ক্যামেরুনের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী একে অপরকে এবং সেনাবাহিনীকে স্কুলে হামলার জন্য সবসময় দায়ী করে আসছে। তবে ক্যামেরুনের সেনাবাহিনী তাদের সেনাদের স্কুলে হামলা এবং বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ক্যামেরুন সরকারকে বর্তমানের এই দন্ডমুক্তির পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে এবং যারা শিক্ষা ক্ষেত্রগুলোতে হামলার জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

XS
SM
MD
LG