কিউবার এক সময়কার কমিউনিস্ট নেতা, দেশটির পরিচালনায় ছিলেন যিনি প্রায় অর্ধ শতাব্দী- মারা গিয়েছেন শুক্রবার রাতে হাভানায়- ৯০ বছর বয়সে।
তাঁরই কনিষ্ঠ সহোদর কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো এ মৃত্যুসংবাদ ঘোষনা করেছেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে- বলেছেন, তাঁর জেস্ঠ ভ্রাতার মরদেহ দাহ করা হবে শনিবারদিন।
কিউবার জনগনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন- দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি আমার দেশবাসিকে, আমাদের এ্যামেরিকার-বিশ্বের মিত্রদেরকে জানাচ্ছি, কিউবা বিপ্লবের সেনাধিনায়ক-প্রধান, ফিদেল কাস্ত্রো পরলোকগমন করলেন রাত দশটা ২৯ মিনিটে- অর্থাত কিনা গ্রীনিচমান সময় তিনটে উনত্রিশ ঘন্টায়। তাঁর মরদেহ দাহ করা হবে।
কাস্ত্রোই পশ্চিম গোলার্ধে কিউবাকে প্রথম কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেন- ১৯ শ’ ৫৯ সালে তাঁর নেতৃত্বাধীন কিউবার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে তদানিন্তন নির্বাচীত প্রেসিডেন্ট Fulgencio Batista-কে ক্ষমতাচ্যুত করবার পর এবং Batista যেমন সামরিক স্বৈরশাষক ছিলেন কাস্ত্রো নিজেও নৃশংস এক একনায়কে পরিণত হন।
কাস্ত্রো ১৯৫৯ থেকে নিয়ে ১৯৭৬ সাল অবধি কিউবায় শাসন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং তার পর ১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি হন কিউবার প্রেসিডেন্ট।লোকে তাঁকে চিনলো এভাবেই সমাজতন্ত্রের চাম্পিয়ান হিসেবে ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিজয়ি বীর হিসেবে। ১৯৬১ সাল থেকে নিয়ে ২০১১ সাল পর্য্যন্ত কাস্ত্রো কিউবার কমিউনিস্ট পার্টীর First Secretary হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
কাস্ত্রো যেদিন হাভানায় প্রবেশ করেছিলেন, হাজার হাজার মানুষ তাঁকে সেদিন উষ্ন অভ্যর্থনা জানিয়েছিলো- একই রকমভাবে হাজার হাজার মানুষ আবার কিউবা ছেড়ে পালিয়েছিলোও কমিউনিস্ট স্বৈরশাসকের নিপিড়নমূলক পুলিশী রাষ্ট্রের কবল থেকে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে- পালিয়েছিলো পরিবার পরিজন ছেড়ে প্রিয় দ্বীপরাষ্ট্রে নিজেদের সহায় সম্বল পেছনে ফেলে।যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছোনোর চেষ্টা করতে প্রাণ হারিয়েছিলো অনেকেই।
কাস্ত্রোর শাসনামলে কিউবা একদলিয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্র পরিণত হয়- শিল্প-বানিজ্য রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়- গোটা সমাজ ব্যবস্থায় ঢালাওভাবে কায়েম হয়ে যায় সমাজতান্ত্রিক রিতিনীতি। মানবাধিকারের কন্ঠরোধের দায়ে বিরুপ সমালোচনা হয তাঁর।
অন্যান্য স্বৈরশাসকদের মতোই কাস্ত্রোও বক্তৃতাসর্বস্ব গলাবাজরুপে পরিচিতি লাভ করেন সেই গোড়া থেকেই।
১৯৫৯ সালে ওয়াশিংটনে এক সফরে এসে কাস্ত্রো এ্যামেরিকানদের কাছে নিজের ভাবমুর্তি সুন্দর করে উপস্থাপন প্রয়াসে কিছুটা নরম সূরেই রাজনৈতিক বক্তব্যের অবতারনা করেন- NBC Television-এর Meet the Press অনুষ্ঠানে বলেছিলেন- গণতন্ত্রই আমার ধ্যানধারণা- কমিউনিস্টদের সঙ্গে মতের মিল নেই আমার- আমরা চাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে।
২০১৫ সালের ২০শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্র কিউবার সঙ্গে কুটনৈতিক সম্পর্ক পূন:স্থাপন করে। তবে সমাজতান্ত্রিক ঐ দ্বীপদেশটির বিরুদ্ধে বলবৎ রাখে বানিজ্যিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা।
তবে এ বছর অক্টোবরে বেশকিছু পরিবর্তন সাধনের মধ্যে দিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে শক্তভাবে চেষ্টা করেন।
এসব পরিবর্তনের মধ্যে ছিল দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের অন্তরায় রয়েছে যেসব বিধিনিষেধ সেগুলো শিথিল করা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে বিজ্ঞান মানবিক বানিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
ক্যাস্ট্রোর মৃত্যূতে একদিকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন; অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লরিডার মায়ামীতে নির্বাসনে থাকা কিউবানরা স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
কিউবা সরকার ক্যাস্ট্রোর মৃত্যু ঘোষনার পর পরই মায়ামীতে কিউবানরা আনন্দ মিছিল বের করেন। অনেকে কউবার পতাকা নিয়ে নৃত্য করেন এবং বলেন এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম লম্বা সময় ধরে।
তাদের অনেকে স্লোগান দেন, ‘কিউবা সি, ক্যাস্ট্রো নো; কিউবা লিব্রে’ ইত্যাদি বলে।
ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর খবরে মায়ামীতে আনন্দরতদের একজন কার্লোস লোপেজ মায়ামী হেরাল্ডকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা শুধুমাত্র একজন মানুষের মৃত্যুতে আনন্দ করছি না; আনন্দ করছি একটি আদর্শের পতনের জন্যে। আমরা আজ যে ক্ষুদ্র স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছি সেজন্যে আনন্দ করছি”।
যুক্তরাষ্ট্রের নব নিআর্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুতে টুইটারে বলেছেন, “ফিদেল ক্যাস্ট্রো মারা গেছেন’।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলান্দ ক্যাস্ট্রোকে বিংশ শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিত্ব বলে মন্তব্য করেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্যাস্ট্রোর প্রশংসা করে বলেন তিনি ছিলেন একটি যুগের প্রতীক।
মেক্সিকোর প্রসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো তাকে বিংশ শদাব্দীর বিপ্লবের প্রোতীক আখ্যা দিয়ে শোক প্রকাশ করেন।
সাবেক সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ বলেন ক্যাস্ট্রো তার দ্বীপদেশটিকে শক্তিশালি করেছিলেন।