জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হেলি মঙ্গলবার বলেন যে গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘাতে ইসরাইল সংযত আচরণই করেছে । তিনি গাজার শাসক, হামাস জঙ্গি গোষ্ঠিকে এই হানাহানির জন্য দায়ি করেন।
গাজা পরিস্থিতিত নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে হেলি বলেন ইরানের সহায়তায় , হামাস সন্ত্রাসীরা ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী এবং অবকাঠামোর ওপর আক্রমণে ইন্ধন যুগিয়েছে।
হেলি এ কথা অস্বীকার করেন যে সোমবার জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস খোলার কারণে এই সহিংসতা দেখা দেয়। তিনি বলেন এর ফলে কোন ভাবেই শান্তির সম্ভাবনাকে খর্ব করা যায় না। হয়ত কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে এটাই হচ্ছে সহিংসতার কারণ । কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দূতাবাস সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার অনেক আগে থেকেই হামাস সন্ত্রাসী সংগঠন অনেক বছর ধরেই সহিংসতায় ইন্ধন যুগিয়ে আসছে।
হেলি বলেন যে ঐ দূতাবাস আমেরিকান জনগণের ইচ্ছের প্রকাশ এবং কোথায় আমাদের দূতাবাস থাকবে সে সিদ্ধান্ত ,নেওয়ার সার্বভৌম অধিকার আমাদের রয়েছে। এই অধিকারের দাবি এই কক্ষে বসা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশের জন্য করবে।
ওদিকে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়ক নিকোলে ম্লাদিনভ , জেরুজালেম থেকে পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন এই হত্যার কোন যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন যে মায়ের সন্তান নিহত হয়েছে , তাকে কেইবা সান্ত্বনা দেবার মতো ভাষা খুঁজে পাবে । ম্লদিনভ হামাসের প্রতিও আহ্বান জানান যে তারা যেন প্রতিবাদ বিক্ষোভের আড়ালে , প্রতিরক্ষা হিসেবে বোমা ব্যবহার করে এবং উস্কানি সৃষ্টি করে।
জাতিসংঘে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত মনসুর আল ওতা্বী বলেছেন যে গতকাল ইসরাইলের সরকারি কর্তৃপক্ষ যে গণহত্যা চালিয়েছ , তাঁর দেশ কঠোরতম ভাষায় এর নিন্দে করছে। তিনি বিভিন্ন দেশের প্রতি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দান এবং অধিকৃত পুর্ব জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশ , বৈরি দেশগুলোর সঙ্গে জেরুজালেমে দূতাবাস খোলার আমেরিকান সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এবং বলে এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরো বাড়বে।ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র একজন মুখপাত্র বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি হবার আগেই জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নিয়ে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবার যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা সহমত নই।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রঁ গাজায় সোমবারের সহিংসতার নিন্দে করেছেন । সেখানে সীমান্ত সংঘাতে ইসরাইলি সৈন্যরা ৫০ জনের ও বেশি ফিলিস্তিনি অসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছে। ম্যাক্রঁ বলেন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পাল্টা প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সার্গেই লাভরভ এবং বহু আরব নেতা এর সমালোচনা করেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভাদ জরিফ ঐ দিনটিকে লজ্জার দিন বলে অভিহিত করেন। সৌদি আরবও গাজায় ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের বন্দুক চালনার কঠোর নিন্দে করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার ও বিরোধীতা করে। লন্ডন সফরকালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন যে এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্ততাকারির ভূমিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে নিজেই বঞ্চিত করলো।