অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইউকিলিকস কর্তৃক সিআইএর তথ্য ফাঁস হওয়ায় উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা


যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ন তথ্য ইউকিলিকস কর্তৃক ফাঁস হওয়ায় উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে এই উদ্বেগ আমেরিকানদের মধ্যেও। সিআইএর তথ্য ফাঁস সহ অল্প সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে নানা ধরণের বিষয় উঠে আসায় অনেকে এই অবস্থাকে ‘ডিপ ষ্টেট’ বলে মন্তব্য করেছেন।

উইকিলিকসের দ্বারা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র ৮ হাজার ৭৭১টি গুরুত্বপূর্ন দলিল ফাঁস হওয়ার খবর বেরিয়েছে। সিআইএ মুখপাত্র অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চান নি। তবে তিনি বলেছেন তার সন্দেহ যে সন্ত্রাসী এবং যুক্তরাষ্ট্রের অপরাপর শত্রুদের কাছ থেকে দেশকে রক্ষায় গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের সামর্থ্যকে নস্যাৎ করার চেষ্টা রয়েছে উইকিলিকস এর।

হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রটারী শন স্পাইসার বুধবারের ব্রিফিং এ সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন।

“এই তথ্য ফাঁস বিষয়টি সকলের জন্যে উদ্বেগের; এ বিষয়ে আমরা সত্য মিথ্যা জানার চেষ্টা করছি। তবে দেশের নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ন তথ্য ফাঁস যা কিছু হচ্ছে তাতে আমেরিকানদের মধ্যে শংকার উদ্রেক করছে। এ ধরণের ঘটনা আমাদের দেশের সামর্থ্যকে খাটো করাচ্ছে, আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে”।

সিআইএর মুখপাত্রের মতোই, স্পাইসার ইউকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করার বিষয়টি এড়িয়ে যান। বেশ কয়েকজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা যারা বিষয়টি জানেন তারা ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছেন, মনে হচ্ছে ঘটনা সত্য।

‌ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষযে অধ্যাপক জনাথন এ্যারনসন বলেন ওই দলিলগুলো এমন যাতে সিআইএর কাজর্মের বিবরণ রয়েছে।

“আমি মনে করি সিআইএ ঠিকমতই কাজ করছে। আপনি যদি চিন্তা করেন যুক্তরাষ্ট সিআইএকে প্রতি বছর লক্ষ কোটি ডলার দিচ্ছে গোয়েন্দা কর্মকান্ড চালানোর জন্য; তবে তা আমেরিকানদের ওপর নয়; সকলের ওপর। ফলে আমি মনে করি এটি যৌক্তিক যে তাদের কাছে এমন যন্ত্রপাতি রয়েছে যা তারা যুক্তরাষ্ট্রের আইন মেনে ব্যাবহার করে; আমেরিকার নাগরিকদের বিরুদ্ধ নয়; তাতে আবাক হবার কি আছে?”

উইকিলিকস বলছে তারা এসব দলিল পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক সরকারী হ্যাকারের কাছ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ভিওএকে বলেন, মনে হয় সিআইএ’র এক কন্টাক্টর এটি করেছে।

কিছু বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা ও পশ্চিমী বিশ্লেষকের মতে, হতে পারে এতে রাশিয়ার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের জানুয়ারীর এক রিপোর্ট বলা হচ্ছে রাশিয়া এবং উইকিলিকসের মধ্যে সম্পর্ক থাকার বিষয়ে তাদের বিশ্বাস রয়েছে।

সিআইএর তথ্য ফাঁস সহ ট্রাম্প প্রশাসনের অল্প সময়ে নানা ধরণের বিষয় উঠে আসায় অনেকে এই অবস্থাকে ‘ডিপ ষ্টেট’ বলে মন্তব্য করেছেন। ষড়যন্ত্র দিয়ে সরকারের নীতিমালায় প্রভাব বিস্তার করা এবং গনতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত প্রশাসনকে খাটো করার বিষয়ে অস্পষ্টতা ও অলক্ষন বোঝাতে সাধারণত ডিপ ষ্টেট ব্যাবহার করা হয়। অনেকে বলছেন এখন ট্রাম্প প্রশাসন সেইরকম অবস্থার মুখোমুখি।

মিশর, পাকিস্তান এবং তুরস্কের অবস্থা সাম্প্রতিক সময়ে ডিপ ষ্টেট এর উদাহরণ। নাভাল ওয়ার কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রবার্ট টমিলসনের মতে,

“অনেক মানুষ অনেক সময় এই অবস্থাকে দুরভিসন্ধিমূলক কাজ বলে থাকেন যা নেতৃত্ব না মেনেই করে অনেকে”।

গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এ ধরনের অবস্থার ইঙ্গিত দেন। টুইট করে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ট্রাম্প টাওয়ারের নজরদারীর নির্দেশ দিয়েছিলেন এমন মন্তব্য করেন।

তিনি কোনো প্রমান দেননি তবে ওবামা ও গোয়েন্দারা তা অস্বীকার করেছেন।

সাবেক সিআইএ এজেন্ট ফ্রেড ফ্লেইটজ রিপাবলিকানদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলেন- এটাকে ডিপ ষ্টেট বলবেন না।

“আমি মনে করিনা এটি ডিপ ষ্টেট অবস্থা। তবে আমি মনে করি আমলাতন্ত্রের মধ্যে সমস্যা রয়েছে যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কাজ করছে”।

ট্রাম্পের সমর্থকেরা হোয়াইট হাউজ কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন কনস্পিরেসী থিওরীর দিকে অতো দৃষ্ট নিবদ্ধ না করে দেশের এবং মানুষের সমস্যা সমাধানে নজর দিতে এবং বিশেষ করে সরকারের আমলাতন্ত্রে যারা রয়েছেন তাদেরকে শুধরানোর কাজ করতে।

XS
SM
MD
LG