অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারত স্বাধীন হবার ৭৪ বছর পর সিপিআইএম পার্টি অফিসে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন


রবিবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিআইএমের সদর দপ্তরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন। ছবি: সিপিআইএম
রবিবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিআইএমের সদর দপ্তরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন। ছবি: সিপিআইএম

ভারতের স্বাধীন হবার ৭৪ বছর পর কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মারক্সিস্ট, সিপিআইএম, এই প্রথম আজ পশ্চিমবঙ্গে তাদের সব ক'টি পার্টি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলো। এটা ঐতিহাসিকভাবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

ভারতের স্বাধীন হবার ৭৪ বছর পর কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মারক্সিস্ট, সিপিআইএম, এই প্রথম আজ পশ্চিমবঙ্গে তাদের সব ক'টি পার্টি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলো। এটা ঐতিহাসিকভাবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট ভারত যখন ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে, তখন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া সিপিআই সেই স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছিল। তাদের মতে, এই স্বাধীনতা পাওয়া গিয়েছে আপসের মাধ্যমে। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে, বিপ্লব করে আসেনি। সুতরাং এটা ভুয়া স্বাধীনতা। সিপিআই নেতা বি টি রণদিভে ধ্বনি তুললেন, "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়।" ফলে স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় পতাকাও তাদের কাছে অর্থহীন হয়ে গেল।

তা ছাড়া দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে বিশেষ করে পাঞ্জাব ও এপার বাংলায় স্বাধীনতার দিনটি ছিল বিভীষিকাময়। কারণ, দেশভাগের ফলে অকারণ হিংসার বলি হয়েছেন বহু মানুষ। বহু মানুষের সর্বস্ব গিয়েছে। বহু পরিবার ছিন্নমূল হয়ে কোনও মতে মাথা গোঁজার আশ্রয় নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ ও উত্তেজনা উপভোগ করতে পারেননি। এবং এঁদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন ছিল অনেকেরই।

সেই থেকে বিগত ৭৪ বছর ভারতে কোনও কমিউনিস্ট নেতা কোথাও স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেননি। কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে কখনও জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়নি। এমনকি ১৯৬৪ সালের নভেম্বরে যখন কম্যুনিস্ট পার্টি ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায় এবং সিপিআইএমের জন্ম হয়, তখনও দুই পার্টির কেউই জাতীয় পতাকা তোলার কথা ভাবেননি।

পশ্চিমবঙ্গে বিগত বিধানসভা নির্বাচনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পর তার কারণ বিশ্লেষণ শুরু হয়। তার প্রেক্ষিতে মাত্র কয়েক দিন আগে সিপিএমের পার্টি সম্মেলনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেমন ৭০ বছরের ওপরে বয়স হয়ে গেলে জেলা কমিটিতে আর থাকা যাবে না। ৭২ বছর হলে রাজ্য কমিটিতে আর নয়। ৭৫ বছর হয়ে গেলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা চলবে না।

পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির বিপুল বিপর্যয়ের পর পার্টির সদস্যদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ দেখা দেয়। নেতারা ঠিক করেন, এবার সময় এসেছে অল্প বয়সীদের হাতে নেতৃত্বের ভার তুলে দেওয়ার। একইসঙ্গে তাঁরা এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এখন থেকে ১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন তাঁরা।

বেশকিছু দিন ধরেই তাঁরা বুঝতে পারছিলেন, কোথাও একটা ভুল হয়েছে, যার জন্য জনগণ থেকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন। তার মধ্যে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকে এক করে 'বিজেমূল' বলাটা উচিত হয়নি, সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সেটা স্বীকার করেছেন। ঠিক তেমনই তাঁরা উপলব্ধি করেছেন, জাতীয় পতাকা না তোলার ফলে বা এই স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার ফলে জনগনের একটা বিপুল অংশ তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের মধ্যে দেশভক্তির কোনও চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় না। রাশিয়া আর চীনের প্রতি তাঁদের যতটা আনুগত্য, নিজের দেশ ভারতের প্রতি তা নেই। এই উপলব্ধির পর কিছুটা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায় সিপিআইএমের রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করেন, জাতীয় পতাকাকে তাঁরা যথাযথ সম্মান দিয়ে প্রতিবছর উত্তোলন করবেন। এ বছর স্বাধীনতার ৭৫ তম দিবসে এই সিদ্ধান্ত প্রথম কার্যকর করা হলো।

আজ রবিবার কলকাতায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিআইএমের সদর দপ্তরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম ও অন্যান্য জেলা কমিটির বিশিষ্ট নেতারা।

XS
SM
MD
LG