অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভুটানে করোনাভাইরাসে মৃত্যু কেন এত কম


ভুটানের থিম্পুর একটি রাস্তায় করোনাভাইরাসের কারণে সতর্কতা হিসেবে মুখে মাস্ক পরে হাঁটছেন ভুটানের মানুষ। ভারত ও চীনের মধ্যে গড়ে ওঠা হিমালয়ের ছোট্ট এই রাজ্যটি প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৯৩ শতাংশ লোককে টিকা দিয়েছে। ১২ এপ্রিল, ২০২১।
ভুটানের থিম্পুর একটি রাস্তায় করোনাভাইরাসের কারণে সতর্কতা হিসেবে মুখে মাস্ক পরে হাঁটছেন ভুটানের মানুষ। ভারত ও চীনের মধ্যে গড়ে ওঠা হিমালয়ের ছোট্ট এই রাজ্যটি প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৯৩ শতাংশ লোককে টিকা দিয়েছে। ১২ এপ্রিল, ২০২১।

আট লক্ষ লোকের জনসংখ্যার দেশ ভুটানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আড়াই হাজার। মারা গেছেন মাত্র দুইজন। এতো স্বল্প সংখ্যক মৃত্যুর কি কারণ হতে পারে সে নিয়ে গবেষণা করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে বড় বড় বিজ্ঞানীরা। জানার চেষ্টা করছেন, কি এমন কারণ- যে দেশটিতে মানুষ ভয়, ডরকে পেছনে ফেলে করোনাকে জয় করেছে।

আপাতত তিনটি কারণের কথা বলা হচ্ছে। এক. কঠোর নজরদারি।দুই. জনসচেতনতা। তিন. সরকারের দেয়া বিধি-নিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা। এছাড়া রয়েছে টিকায় পূর্ণ আস্থা। দেশটির সঙ্গে ভারত ও চীনের সীমান্ত রয়েছে। দুটি দেশই করোনায় কাতর।

শুরুটা তো হয়েছিল চীন থেকে। বলা হয়ে থাকে, করোনার আঁতুড়ঘর চীন। তাই ২০২০ এর ২২শে মার্চ সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ভুটান। শুধুমাত্র নিত্যপণ্য আমদানির সুযোগ ছিল। সীমান্ত বন্ধ কাগজে-কলমে ঘোষণা নয়। রাজা নিজেই সীমান্ত পাহারায় নেমে যান। অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। সীমান্তে নজরদারির জন্য দেশের রাজা এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। এক বার, দু'বার নয়, ১৪-১৫ বার নজরদারি চালান তিনি। রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক একাই নন। সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। যিনি নিজেই একজন চিকিৎসক।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। বাংলা বলেন চমৎকার। ভুটানে কড়া বিধি-নিষেধ জারি করে সরকার। ভাইরাস রুখতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে তাক লাগিয়ে দেয়। যে কারণে বার বার বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনামে বজ্র ড্রাগনের এই দেশ। ভারত থেকে আমদানি করে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। প্রথম ডোজ টিকা সম্পন্ন করে দু' সপ্তাহে।

৯০ শতাংশ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিয়ে রেকর্ড গড়ে। ইউনিসেফের মতে, এটাই সম্ভবত দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রম। ১২০০ টিকাদান কেন্দ্রে তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মী দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। সম্ভবত এ কারণেই সংক্রমণে ভুটানের নাম এখন একদম নিচে ১৮৯তম স্থানে । বিষয়টি ঠিক এমন নয় যে, আকারে ছোট এবং জনসংখ্যা কম বলে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ নয়। প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে টেস্ট করার দিক থেকেও সামনের সারিতে। দক্ষিণ এশিয়ায় মালদ্বীপের পরেই রয়েছে ভুটান। জনসংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি টেস্ট করা হয়েছে দেশটিতে।

২০১৯ সনের শেষের দিকে চীনে যখন অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ার খবর পাওয়া যায় তখনই ভুটান সরকার আঁচ করতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়। বিমানবন্দর ও সীমান্তে স্ক্রিনিং মেশিন বসানো হয়। জ্বরে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে আলাদা করা হয়। ভুটানে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হন একজন আমেরিকান পর্যটক। সাথে সাথে তার সংস্পর্শে আসা সবাইকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়। পর্যটক প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। বিদেশ-ফেরত ভুটানিদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্থানীয় জনগণ অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করে।

XS
SM
MD
LG