ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরে অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু আগামী একশ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় কী করবে তা নিয়ে মহাপরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে একাডেমিক মহাপরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার (১ ডিসেম্বর) ঢাবির শতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ১৯২১ সালে যখন এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। তাই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলা হয়েছে একটি গবেষণামুখী শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে। অথচ আজ শতবর্ষের ক্ষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাবতে হচ্ছে, নতুন করে জোর দিতে হচ্ছে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের দিকে। বিগত একশ বছরের অগ্রযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যেতে হয়েছে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। শুরুর এক দশকের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে সারা বিশ্বের দরবারে সুনাম অর্জন করেছিল, দুঃখজনক হলেও সত্য, সে অগ্রযাত্রার গতি নানা কারণেই ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চিন্তা করতে হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন একাডেমিক মহাপরিকল্পনা। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো প্রণয়ন করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ ভৌত মাস্টারপ্ল্যান।
বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়টির শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্য-প্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে সেভাবে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে। ’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভূটানের প্রধানমন্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই লোটে শেরিং ভার্চ্যুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, নবাব সলিমুল্লাহ এবং সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরীর মত নেতাদের কাছে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং তারা তা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার একটি ঐতিহাসিক সম্পদ এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম একদিন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আপনারা সময় নষ্ট করবেন না। আপনারা আমাদের ভবিষ্যৎ। সোনার বাংলা গড়তে যে ধরনের আত্মপ্রত্যয় থাকা দরকার তা অর্জনে অবশ্যই আপনাদের সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ২৫ বছর পর তাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। আপনারা সেই বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেনীর বিকাশ ঘটিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বিবর্তন ও উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অব্যাহতভাবে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে।