আঙ্গুর নাহার মন্টি, ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার
সহযোগিতায়: ইউএসএআইডি ও ভয়েস অফ আমেরিকা
উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন সুপরিচিত নাম। গত কয়েক দশকে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অগ্রগতি এবং নারীর ক্ষমতায়নে রয়েছে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্য। এতো ইতিবাচক অর্জনের মধ্যে শিশুর অপুষ্টি ইস্যুটি এখনো চ্যালেঞ্জই রয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশ দক্ষতার সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পুষ্টি বিভাগের তথ্য অনুসারে, এ দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ৪৫ শতাংশ অপুষ্টির কারণে হয়ে থাকে। অপুষ্ট শিশুদের কারও বয়সের তুলনায় ওজন বা উচ্চতা কম, আবার কারও উচ্চতার তুলনায় ওজন কম। ৩৫ শতাংশ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ৪১ শতাংশ শিশু খর্বকায় বা কম উচ্চতার। এই একই বয়সের ৫১ শতাংশ শিশু রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। অন্যদিকে সন্তান জন্মদানে সক্ষম বয়সের ৪২ শতাংশ নারী রক্তস্বল্পতায় ভোগেন।
‘বৈশ্বিক পুষ্টি প্রতিবেদন ২০১৪’ তেও বলা হয়েছে, শিশুদের খর্বতা, কৃশতা, কম ওজন, বেশি ওজন এবং নারীদের রক্তস্বল্পতা কমানোর ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাংলাদেশের জন্য এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি ‘জাতীয় পুষ্টিনীতি ২০১৫’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন করা হয়েছে উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন) ও জাতীয় পুষ্টি সেবা‘র (এনএনএস) পরিচালক ডা. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আগের পুষ্টি কার্যক্রম থেকে উঠে এসে আমরা মূলধারায় এনেছি। এখন কম্যুনিটি লেভেলে ও স্বাস্থ্যখাতের সকল কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পাশাপাশি মানুষের কাছে পুষ্টিবার্তা পৌছেঁ দিচ্ছি।
পুষ্টিখাতে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুষ্টির ক্ষেত্রে শুধু খাদ্য নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। এর সঙ্গে শিক্ষা, ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক অবস্থান ও বাল্যবিয়েসহ বিভিন্ন ইস্যু জড়িত রয়েছে। তবে পুষ্টিখাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে সরকারকে আরো বিনিয়োগ করতে হবে। মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে।
খসড়া ‘জাতীয় পুষ্টিনীতি ২০১৫’র লক্ষ্য ও কৌশল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই পুষ্টিনীতির আলোকে জনগণ বিশেষ করে শিশু, কিশোরী, গর্ভবতী মা ও প্রসূতি মাসহ সকল নাগরিকদের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি করা, অপুষ্টি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা, বৈচিত্র্যপূর্ণ, নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা, পুষ্টিকেন্দ্রিক ও পুষ্টিসম্পর্কিত প্রত্যক্ষ কার্যক্রম জোরদার করা আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
এখন আর ক্ষুধা নয়, অপুষ্টিই আমাদের উন্নয়নের পথে প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর শিশুর অপুষ্টি একক কোনো স্বাস্থ্যসমস্যা নয়। শিক্ষা, উন্নয়ন তথা জাতীয় সব ইস্যুর সঙ্গেই এটি যুক্ত। এই অপুষ্টি দূর করার জন্য চাই সমন্বিত উদ্যোগ। সম্মিলিতভাবেই এই অপুষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে।