আজ ৮ই জুন সোমবার পূর্বঘোষণা মতো জীবন ও জীবিকার মধ্যে সামঞ্জস্য আনার লক্ষ্যে আনলক প্রক্রিয়া আরও খানিকটা এগিয়ে গেল। আজ থেকে ধর্মস্থান অর্থাৎ মসজিদ মন্দির গির্জা, এইসব তো খুলছেই, সেইসঙ্গে খুলছে হোটেল-রেস্তোরাঁ, শপিং মল, অফিস কাছারি, ইত্যাদি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, এতকিছু খোলা মানে লোকজনের ভিড় রাস্তায় আরও বেশি বাড়বে এবং তাঁদের কর্মস্থলে পৌঁছতে কোনও একটা যানবাহন লাগবে। যেহেতু প্রত্যেকের গাড়ি নেই বা নিজস্ব বাহন নেই, সেহেতু গণপরিবহনের উপর ৯০% মানুষকে নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। এই নির্ভর করে থাকাটা তখনই সম্ভব যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিবহন ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি বাস যদি বা কিছু চলছে, সরকার যতটা বলছে ততটা অন্তত রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। বেসরকারি বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি বলে এখনও রাস্তায় নামতে চাইছে না। কয়েকটি মিনিবাস নেমেছে বটে, কিন্তু সাধারণভাবে বেসরকারি বাস নামবে তখনই, যখন ভাড়া বাড়ানো হবে। সেটা কবে হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আছে ট্যাক্সি অটোরিকশা এবং অ্যাপ ক্যাব। অটোরিকশা যথেচ্ছ ভাড়া বাড়িয়েছে, ট্যাক্সিও যা খুশি তাই ভাড়া নিচ্ছে, অ্যাপ ক্যাব অবশ্য সে রকম করছে না, কিন্তু তাতে চড়ার ক্ষমতা বা স্মার্টফোনে অ্যাপ ব্যবহার করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং একটা অসুবিধে থেকেই যাচ্ছে এবং লোকে প্রাণান্ত পরিশ্রম করে অনেক কষ্ট করে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আজ সকালে অফিস টাইম শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও দেখা গিয়েছে কলকাতায় বাসের জন্য লম্বা লম্বা লাইন, বাস ডিপোর সামনে অধৈর্য যাত্রীদের ভিড় এবং এই দুর্ভোগে তাঁরা ঘোরতর অসন্তুষ্ট। এরকমই দু-একজনের কথা আমরা একটু শুনি, তাঁরা কী বলছেন.
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সরকারি অফিসগুলোতে ৭০% কর্মচারীর উপস্থিতি থাকবে বাকি ৩০ শতাংশ আপাতত ঘরে বসে কাজ করবেন। কলকাতা পুরসভাতেও ১০০% হাজিরা চেয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তবে কী ভাবে তার কর্মচারীরা অফিসে যাবেন বা কাজে যাবেন সেটা নিয়ে একটা অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল বলে মেয়র বলেছেন, কর্মীদের অফিসে নিয়ে আসা দিয়ে আসার একটা ব্যবস্থা করা হবে। যদিও সেই ব্যবস্থা কী তিনি এখনও খুলে বলেননি। নানান জায়গায় পরিবহনের কারণে এতই অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে যে রেস্তোরাঁ খুললেও তাতে কতজন খদ্দের পাওয়া যাবে, শপিং মলে কতজন যাবেন, সব নিয়েই একটা সন্দেহের কারণ আছে। বাকি সব জায়গাগুলোতে যদি বা গেলেও হয়, না গেলেও হয়, কিন্তু অফিসে হাজির হওয়াটাই এখন কর্মচারীদের সবচেয়ে বড় চিন্তা। কারণ অফিস খোলার পর হাজির না হলে বেতন পাওয়া যাবে না। এমনিতেই বেতন নিয়ে, এই লগডাউনের সময় বকেয়া বেতনের টাকাপয়সা পাওয়া, দেওয়া-নেওয়া ইত্যাদি নিয়ে এতদিন একটা বিভ্রান্তি ছিলই। এখনও অনেকেরই দুশ্চিন্তা চলছে, অনেকের চাকরি গিয়েছে, অনেকে টাকা পাননি, সুতরাং খুব তাড়াতাড়ি এই সবের একটা ব্যবস্থা না করলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
দীপংকর চক্রবর্তী, ভয়েস অফ আমেরিকা, কলকাতা