অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের সব রাজ্য মিলিয়ে আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে


ভারতের সব রাজ্য মিলিয়ে আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮। দেশজুড়ে আকস্মিক লকডাউন ঘোষণার ফলে এক রাজ্য থেকে অন্য জায়গায় কাজ করতে যাওয়া লক্ষ লক্ষ শ্রমিক একা কিম্বা পরিবার সহ আটকে পড়েছেন। শুধুমাত্র দিল্লির আশপাশের এলাকাতেই আটক এধরনের লাখখানেক শ্রমিককে রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে গতকাল উত্তরপ্রদেশের সরকার এক হাজার বাসের ব্যবস্থা করে। সেই সঙ্গে দিল্লি সরকার দেয় আরও দুশো বাস। কিন্তু সেই সব বাসে করে নিজের নিজের দেশেগ্রামে যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে বিপুল ভিড় হওয়ার ফলে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার প্রাথমিক সতর্কতার নিয়ম কানুনই আর মানা যায়নি।

লকডাউনের বিধিনিষেধ ভেঙে পড়ে, ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। হাতে টাকা নেই, ঘরে খাবার নেই, হাজার হাজার শ্রমিক মরিয়া হয়ে তাঁদের কাজের জায়গা থেকে গ্রামে ফেরার জন্য হাইওয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করেন। এমনই এক জন শ্রমিক ৩৮ বছরের রণবীর সিং দিল্লি থেকে হেঁটে রওনা হন সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশে তাঁর গ্রামের দিকে। প্রচণ্ড রোদে পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে আগ্রার কাছে গিয়ে রাস্তায় পড়ে মারা যান তিনি।

এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল গতকাল ও আজ বারবার দিল্লির বাসিন্দাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন, কেউ যেন নিজের জায়গা ছেড়ে না বেরোন। কেজরীওয়াল বলেন, দিল্লিতে নানা জায়গায় ত্রাণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যে কেউ সেখানে গিয়ে বিনা মূল্যে দুপুরে ও রাতে খেতে পারেন। যাঁদের থাকার জায়গার সমস্যা হচ্ছে তাঁদের আশ্রয় ও খাবার জোগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে গ্রামে চলে যেতে চাইছেন।

সারা দেশের সঙ্গে কলকাতায় এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বহু মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতার অভাব দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দুপুরে তাঁর মন কি বাত নামে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে আবারও সতর্ক করে দিয়ে বলেন, লকডাউন ঠিকঠাক না মানলে চরম বিপদ ডেকে আনা হবে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং দেশের জন্য। তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই এখন সবচেয়ে বড় সামাজিক দায়িত্ব। তবে তার জন্য মানসিক দূরত্ব যেন না বাড়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আজ রাজ্যবাসীকে লকডাউন কঠোর ভাবে মেনে চলার ডাক দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে রাজ্যের মন্ত্রীরা, তৃণমূলের বিধায়কেরা এবং পুরসভার কাউন্সিলররা পাড়ায় পাড়ায় প্রতিটি বাজারে গিয়ে মাস্ক বিলি করছেন, জিনিসপত্রের জোগান ঠিক আছে কিনা খোঁজ নিচ্ছেন। মুদির দোকান বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান পুরো সময় খোলা রাখতে নবান্ন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের আদালতগুলিতেও একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ করা হয়েছে। করোনার জন্য আদালতে হাজির হওয়া বারণ, ফলে প্রচুর মামলা জমে গিয়েছে। এখন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীরা ঠিক করেছেন, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। আগামী কাল সোমবার থেকে তাঁদের মামলা চলবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।

এদিকে করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতে সাহায্য করতে প্রধানমন্ত্রীর জরুরি ত্রাণ তহবিলে ভারতের নানা নামী ব্যক্তি ও সংস্থা অর্থ দিচ্ছেন। রতন টাটা ৫০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলার পরপরই টাটার অন্য সংস্থার তরফে ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। বলিউড তারকা অক্ষয় কুমার দিয়েছেন ২৫ কোটি, ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জি প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দিয়েছেন ১ কোটি আর মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫০ লাখ টাকা। এরকম আরও অনেকেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন।

XS
SM
MD
LG