আফগানিস্তান থেকে ১২৯ জন ভারতীয়কে রবিবার দেশে ফিরিয়েছে নয়াদিল্লি। কিন্তু সোমবার কাবুল বিমানবন্দর ও আফগানিস্তানের আকাশ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতীয়দের উদ্ধারকাজ থমকাল। ফলে কাবুল তথা আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার নিয়ে এখন উৎকণ্ঠা বাড়তে শুরু করেছে নয়াদিল্লিতে।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেশে নেই। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে তিনি নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তবে ভারতীয়দের উদ্ধারের প্রশ্নে সোমবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি নয়াদিল্লিতে বলেন, “কাবুলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির গত কয়েকদিনে দ্রুত অবনতি হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। আফগানিস্তানের পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপর নয়াদিল্লি নজর রেখে চলেছে। ভারতীয়দের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরানোর জন্য ও তাঁদের নিরাপত্তার স্বার্থে সময়ান্তরে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, কাবুল তথা আফগানিস্তানে মোটামুটি ভাবে ১৩০ জন ভারতীয় আটকে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয় দূতাবাস কর্মী বা সাপোর্ট স্টাফ। এছাড়া কাবুলে ভারতীয় ব্যাঙ্ক শাখার কিছু কর্মীও রয়েছেন। সেই সঙ্গে আফগান-শিখ ও আফগান-হিন্দু সহ আরও কমবেশি ২০০ জন রয়েছেন কাবুলে। তাঁদের অনেকেই কাবুলের গুরুদ্বারায় রয়েছেন বলে জানাচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “কাবুলে আটকে পড়া ভারতীয়দের সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রক প্রতিনিয়ত যোগাযোগে রয়েছে। তাঁদের যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা হচ্ছে।” অরিন্দম আরও জানিয়েছেন, কাবুলে স্থিত আফগান-শিখ ও আফগান-হিন্দুদের মধ্যে যাঁরা ভারতে ফিরতে চাইবেন, তাঁদের সে ব্যাপারে সাহায্য করতে প্রস্তুত নয়াদিল্লি। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে স্থানীয় অনেক আফগান ভারতের পাশে ছিলেন। সংকটের সময়ে তাঁদের পাশেও থাকবে নয়াদিল্লি।
এখন প্রশ্ন হল, আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়দের কতদিনে উদ্ধার করা যাবে? জবাবে অরিন্দম বলেন, “বিমান পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। তা শুরু হলেই দেশে ফেরানোর কাজ শুরু হবে”।
তবে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর ব্যাপারে আরও বহুবিধ উদ্বেগ রয়েছে নয়াদিল্লির। কারণ, বিমান পরিষেবা কিছুদিন পর যদিও বা শুরু হয় আফগানিস্তান বা কাবুলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভারতীয়দের কাবুল বিমানবন্দরে নিয়ে আসাটা একটা চ্যালেঞ্জ। বিমান পরিষেবা শুরু হলে নয়াদিল্লি কেবল তাঁদের বিমানবন্দরে পৌঁছে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে না। কারণ, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। পথে ভাল-মন্দ কিছু ঘটে গেলে তার দায় বর্তাবে সরকারের উপর।
বস্তুত আফগানিস্তান ফের তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার পর নয়াদিল্লির উদ্বেগ এখন দুটি। এক, তালিবানদের উত্থানের ব্যাপারে ভারত কূটনৈতিক ও কৌশলগত ভাবে কী অবস্থান নেবে? দুই, আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার কীভাবে করা যাবে?
বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা এদিনে বোঝাতে চেয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে ভারতীয়দের নিরাপদে উদ্ধারের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ভারত। নয়াদিল্লির কৌশলগত অবস্থান কী হবে তা আগামী দিনে তালিবানদের আচরণের উপর নির্ভরশীল। আফগানিস্তানের পরিস্থিতির গতিশীলতা বুঝে তা স্থির করবে ভারত। সেই প্রেক্ষাপটে বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আমেরিকা সফর যারপরনাই তাৎপর্যপূর্ণ।