ভারতের যে শহরগুলো উদার মানসিকতার জন্য পরিচিত, তার মধ্যে কলকাতা অন্যতম। কিন্তু এই শহরের দীর্ঘদিন ধরে একটা অপূর্ণতা ছিল। যাঁদের ট্রান্সজেন্ডার বা উভলিঙ্গ বলা হয়, সেই মানুষদের জন্য বাসে ট্রেনে আলাদা করে কোনও আসন সংরক্ষণ ও তাঁদের মর্যাদা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা এতদিন ছিল না। সেই অপূর্ণতা কিছুটা হলেও মিটতে চলেছে। এই শহরেরই এক তরুণ শোভন মুখার্জির চেষ্টায় ২০৫ নম্বর বাস রুট, যা দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণী থেকে মধ্য কলকাতার বাবুঘাট পর্যন্ত যায়, তার প্রতিটি বাসে অন্তত একটি করে সিট উভলিঙ্গের মানুষদের জন্য সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। মাসখানেক হলো এটা চালু হয়েছে, এর মধ্যে কিছুটা হলেও সাড়া পড়েছে। আপাতত ২০৫ নম্বর রুটের ৩৬টি বাসে এ ভাবে আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য বাস রুটেও এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে বাস সিন্ডিকেটের নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন।
এর সূত্রপাত হয়েছিল বছর চারেক আগে। শোভন মুখার্জির উভলিঙ্গ বন্ধু রঞ্জিত সিনহা, যিনি নিজেও একজন সমাজকর্মী, মেট্রোতে একটি আসনে বসতে গিয়ে বাধা পান। তাঁকে চূড়ান্ত অপমান করা হয় এবং সেই কামরা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষের মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছিল। তাঁরা চেষ্টা করছেন উভলিঙ্গের মানুষদের জন্য বাসে ট্রেনে আসন সংরক্ষণের। তাতে হয়তো একটু নিরাপদ ভাবে সম্মানের সঙ্গে তাঁরা যাতায়াত করতে পারবেন। এই সিটগুলোর উপরে আলাদা করে লিখে দেওয়া হয়েছে "ত্রিধারা".. তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে। আমরা আশা করব অদূর ভবিষ্যতে এই শহরের সব বাস, এই রাজ্যের সব বাস উভলিঙ্গের মানুষদের মর্যাদা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। আদালতের নির্দেশে কিন্তু বলা রয়েছে, উভলিঙ্গের মানুষেরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, বাকি সকলের মতোই সমান মর্যাদার অধিকারী।