আঙ্গুর নাহার মন্টি
ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার
সহযোগিতায় - ইউএসএআইডি ও ভয়েস অফ আমেরিকা
‘অগ্রগতির মূল কথা, নারী-পুরুষ সমতা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে ৮ মার্চ পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪। প্রতি বছর দিনটিতে নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অর্জন আর অগ্রগতি উদযাপনের পাশাপাশি নারীর প্রতি নির্যাতন, বৈষম্য ও অন্যায়ের একটি হিসেব করা হয়। মূল্যায়ন করা হয় নারীর শ্রম আর অবদান কতটা স্বীকৃতি পেলো। তাই দিনটি হয়ে উঠে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিরসনের জন্য নতুন করে শপথ নেয়ার দিন।
দেশে প্রথমবারের মতো নারী নির্যাতন নিয়ে করা সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় পর্যায়ের জরিপটি এবার নারী দিবসে নারীর অগ্রগতি ও বৈষম্যের খতিয়ানে তুমুল ঝড় তুলে দিয়েছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহায়তায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) Ôভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন (ভিএডবিøউ) সার্ভে ২০১১’ নামের জরিপটি গত ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশ করেছে। এই জরিপে উঠে এসেছে, দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই কোনো না কোনো সময়ে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক এবং ৫৩ শতাংশ অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আরও অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, এই নারীদের ৭৭ শতাংশই বলেছেন, তারা গত এক বছরে একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
নারীর ক্ষমতায়নে যখন সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অর্জনগুলো প্রশংসিত হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে দেশের নারীদের ওপর ঘরের মধ্যে নির্যাতনের এমন চিত্র আমাদের অন্যরকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। প্রশ্ন উঠেছে, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজ যদি এভাবে ঘরের ভেতরে নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন তাহলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কিভাবে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে?
এ প্রসঙ্গে ইউএসএআইডি’র জেন্ডার বিশেষজ্ঞ মাহমুদা রহমান খান বলেন, এর (বিবিএসের সাম্প্রতিক জরিপ) মানে প্রতিদিনই নারী ঘরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এতে কিন্তু আমরা ভীষণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে গেছি। এতো অগ্রগতি সত্ত্বেও এমনটি যদি ঘটে তাহলে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?
নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সকল কর্মক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে এসেছে। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও উচ্চ মাধ্যমিকে অনেকে ঝরেও পড়ছেন। উচ্চশিক্ষায় নারীদের এগিয়ে যাওয়ার সংখ্যাটিও লক্ষ্যণীয় নয়। এর কারণ আমরা পুরুষ দৃষ্টিভঙ্গীর বিশেষ পরিবর্তন করতে পারিনি। নারী নির্যাতন রোধে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এ ব্যাপারে শুধু নারীকে নিয়েই কাজ করলে হবে না, পুরুষদের নিয়েও কাজ করতে হবে।
এদিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বহুদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও এটি এখনো নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারই রয়ে গেছে। লজ্জায় নারীরা নির্যাতন নিয়ে খুব একটা মুখ খুলছেন না। ফলে নারী নির্যাতনের মতো সামাজিক অপরাধের সংখ্যা ও মাত্রা বাড়ছেই। এ কারণে বিবিএসের জরিপটিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নীরবতা ভেঙে বিষয়টি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার
সহযোগিতায় - ইউএসএআইডি ও ভয়েস অফ আমেরিকা
‘অগ্রগতির মূল কথা, নারী-পুরুষ সমতা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে ৮ মার্চ পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪। প্রতি বছর দিনটিতে নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অর্জন আর অগ্রগতি উদযাপনের পাশাপাশি নারীর প্রতি নির্যাতন, বৈষম্য ও অন্যায়ের একটি হিসেব করা হয়। মূল্যায়ন করা হয় নারীর শ্রম আর অবদান কতটা স্বীকৃতি পেলো। তাই দিনটি হয়ে উঠে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিরসনের জন্য নতুন করে শপথ নেয়ার দিন।
দেশে প্রথমবারের মতো নারী নির্যাতন নিয়ে করা সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় পর্যায়ের জরিপটি এবার নারী দিবসে নারীর অগ্রগতি ও বৈষম্যের খতিয়ানে তুমুল ঝড় তুলে দিয়েছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহায়তায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) Ôভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন (ভিএডবিøউ) সার্ভে ২০১১’ নামের জরিপটি গত ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশ করেছে। এই জরিপে উঠে এসেছে, দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই কোনো না কোনো সময়ে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক এবং ৫৩ শতাংশ অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আরও অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, এই নারীদের ৭৭ শতাংশই বলেছেন, তারা গত এক বছরে একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
নারীর ক্ষমতায়নে যখন সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অর্জনগুলো প্রশংসিত হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে দেশের নারীদের ওপর ঘরের মধ্যে নির্যাতনের এমন চিত্র আমাদের অন্যরকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। প্রশ্ন উঠেছে, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজ যদি এভাবে ঘরের ভেতরে নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন তাহলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কিভাবে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে?
এ প্রসঙ্গে ইউএসএআইডি’র জেন্ডার বিশেষজ্ঞ মাহমুদা রহমান খান বলেন, এর (বিবিএসের সাম্প্রতিক জরিপ) মানে প্রতিদিনই নারী ঘরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এতে কিন্তু আমরা ভীষণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে গেছি। এতো অগ্রগতি সত্ত্বেও এমনটি যদি ঘটে তাহলে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?
নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সকল কর্মক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে এসেছে। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও উচ্চ মাধ্যমিকে অনেকে ঝরেও পড়ছেন। উচ্চশিক্ষায় নারীদের এগিয়ে যাওয়ার সংখ্যাটিও লক্ষ্যণীয় নয়। এর কারণ আমরা পুরুষ দৃষ্টিভঙ্গীর বিশেষ পরিবর্তন করতে পারিনি। নারী নির্যাতন রোধে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এ ব্যাপারে শুধু নারীকে নিয়েই কাজ করলে হবে না, পুরুষদের নিয়েও কাজ করতে হবে।
এদিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বহুদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও এটি এখনো নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারই রয়ে গেছে। লজ্জায় নারীরা নির্যাতন নিয়ে খুব একটা মুখ খুলছেন না। ফলে নারী নির্যাতনের মতো সামাজিক অপরাধের সংখ্যা ও মাত্রা বাড়ছেই। এ কারণে বিবিএসের জরিপটিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নীরবতা ভেঙে বিষয়টি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করার সুপারিশ করা হয়েছে।