সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনাকে অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টে সোমবার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তাকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। ওই সময় তাকে হেনস্থা করা হয়।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের তরফে রোজিনার ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। কিন্তু আদালত তাতে সাড় দেননি। তবে জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন। বৃহস্পতিবার জামিন প্রশ্নে শুনানি হতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গোপন নথি চুরি করার অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। বলা হয়েছে, রোজিনা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কক্ষ থেকে গোপন নথির ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় তা কর্মকর্তাদের নজরে আসে।
রোজিনা বেশ কিছুদিন যাবত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট করে আসছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোজিনা বলেছেন, তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যেসব নথি নিয়ে যাচ্ছিলেন তা প্রকাশ হলে দেশের ক্ষতি হয়ে যেতো। রোজিনাকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন মন্ত্রী। উল্লেখ করা যায় যে, ১৯২৩ সনে প্রণীত আইনে করা মামলায় অভিযুক্ত হলে সর্বনিম্ন ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা হতে পারে।
রোজিনার গ্রেপ্তারে দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সোমবার রাতে শাহবাগ থানার সামনে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ করেন। মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত প্রেস ব্রিফিংও বর্জন করেন সাংবাদিকরা। বিকালে প্রথম আলোর সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেন।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট রোজিনার মুক্তি দাবি করেছে। সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহারেরও দাবি জানায়। রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, রোজিনা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কোন চিকিৎসা না দিয়ে আটকে রাখার ঘটনা অমানবিক।
বিরোধী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার ভয়েই সাংবাদিক রোজিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্যই এই গ্রেপ্তার। তিনি অবিলম্বে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে রোজিনার মুক্তি দাবি করেন।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এক বিবৃতিতে অবিলম্বে রোজিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রে দুর্নীতিবাজ আমলারা কতোটা বেপরোয়া এ ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ।
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও তার মুক্তি দাবি করেছেন ১১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদারসহ বিশিষ্ট এই নাগরিকগণ রোজিনাকে হেনস্তার ঘটনা তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)বলেছে, রোজিনা ইসলামের প্রতি আচরণ স্বাধীন সাংবাদিকতার টুটি চেপে ধরার শামিল।