ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ শুক্রবার সকালে এক আকস্মিক সফরে লাদাখের ভারত-চীন সীমান্তে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভারতের সামরিক বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত আর স্থল বাহিনীর প্রধান জেনারেল নরবনি। কথা ছিল জেনারেল দুজনই আজ সকালে ওখানে যাবেন, কিন্তু হঠাৎই লাদাখের লেহ্ বিমানঘাঁটিতে দিল্লি থেকে আসা বিমান থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নামতে দেখে উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে যান। মোদী দুই সেনাপ্রধানকে নিয়ে একটি হেলিকপ্টারে করে লেহ্ থেকে যান আরও ওপরদিকে হিমালয়ের কোলে নিমু বলে একটি জায়গায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সীমান্ত ঘাঁটিতে।
তার খুব কাছেই গালওয়ান, যেখানে চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন গত ১৫ ই জুন। তারপর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বেশ কয়েকবার চীনের নাম না করে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সম্প্রসারণবাদের দিন ফুরিয়েছে।অন্য দেশের ভূখণ্ড এখন গায়ের জোরে দখল করা যায় না। ভারত আর কোনও আগ্রাসন সহ্য করবে না। ভারতের মাটিতে শত্রু সেনা থাকলে তার যোগ্য জবাব দেবে, ইত্যাদি। যদিও চীনের নাম না করার জন্য বিরোধীদলগুলো তাঁর যথেষ্ট সমালোচনা করেছে। ইতিমধ্যে চীনা পণ্য নিষিদ্ধ করে চীনা মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ করে ভারত একটা বার্তা দিতে চেয়েছে চীনকে। তবে আজকের এই সফর প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিতভাবে সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়াতে করেছিলেন। ওই অঞ্চলে মোতায়েন ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং ইন্দোটিবেটান বর্ডার পুলিশ বা আইটিবিপি জওয়ানদের সঙ্গে তিনি কথাবার্তা বলেন। তার পর একটি আবেগপ্রবণ ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী
মোদী বলেছেন, আপনারা আজ ভারতের সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছেন। তবে আপনাদের সাহস এই হিমালয় পর্বতের উচ্চতাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। আজকেও একবারও চীনের নাম করেননি নরেন্দ্র মোদী। তবে পরোক্ষভাবে চীনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভারত ষাটের দশকের ভারত নয়। এই ভারত আগ্রাসন সহ্য করবে না। যতবার শত্রু আক্রমণ করবে, ভারত ততবার নিজেকে আরও বেশি প্রস্তুত করে তুলবে। প্রতিটি আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ভারত আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। মোদী বলেন ভীরুরা দেশরক্ষায় সমর্থ হয় না, সাহসীরাই দেশের প্রকৃত শক্তি। প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনীর মধ্যে নারী বাহিনীর বিশেষ করে প্রশংসা করে বলেন, নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে নারী বাহিনী যেভাবে দেশ রক্ষার কাজ করে চলেছে তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। উপস্থিত সৈন্যদের উদ্দেশে মোদী বলেন, আপনারা সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে আপনারা দেশ রক্ষায় সক্ষম। আর আমরা ভারতবর্ষের মানুষও তাই আপনাদের সাহস ও বীরত্বের জন্য নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছি, কারণ দেশবাসী জানেন যে আপনাদের হাতে দেশ নিরাপদ, সুতরাং তাঁরাও নিরাপদ। সারা দেশের নানা জায়গা থেকে সৈন্যরা এসেছেন এখানে কাজ করতে, তাঁদের কয়েক জন কর্তব্যপালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু আমি বলে রাখছি এই প্রাণদান বিফলে যাবে না। ভারত আপনাদের বীরত্বের কথা চিরকাল কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।