অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিএসএফের এলাকা বৃদ্ধি নিয়ে মোদীকে চিঠি লিখলেন মমতা


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- ফটো কোলাজ- এপি ও এএফপি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- ফটো কোলাজ- এপি ও এএফপি

বিএসএফের নজরদারির আওতায় আরও বেশি এলাকাকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভরতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চিঠিতে দাবি করেছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আঘাত হানছে তাই কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে হবে।

দু'সপ্তাহ হয়েছে, বিএসএফের পরিধি বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত প্রকাশের। এর বিরুদ্ধে সবার আগে প্রতিবাদ জানিয়েছিল পাঞ্জাব। রবিবার উত্তরবঙ্গ সফরে ছিলেন মমতা। সেখান থেকেও তিনি এই নিয়ে অভিযোগ তোলেন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের। সোমবার চিঠিও লিখলেন মমতা।

ভারতীয় সীমানার ভিতরে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা এত দিন এই কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর নজরদারির আওতায় ছিল, সেটিই বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এর ফলে মুর্শিদাবাদে এবং উত্তরবঙ্গের বেশ খানিকটা এলাকায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত জুড়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গের ছ'টি জেলা। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার ও শিলিগুড়ি। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে মোট ৫২টি থানার আওতাধীন এলাকা বিএসএফের নিয়ন্ত্রণে ঢুকে পড়বে।

১১ অক্টোবর এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অর্থাৎ বাংলায় তখন ভরপুর পুজার মরসুম চলছে। সেই ছুটির পর সোমবার প্রশাসনিক কাজকর্ম শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন মমতা।

সূত্রের খবর, মমতা লিখেছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বিএসএফ আইনের পরিপন্থী। রাজ্যের বক্তব্য, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মোট ২১৬৪.৭১ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। এ রাজ্যের আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গ কিলোমিটার। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মানতে হলে ধরে নিতে হবে, সেই আয়তনের মধ্যে প্রায় ৩২,৪০০ বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ রাজ্যের ৩৭% এলাকাই বিএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। এটা রাজ্যের এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা এবং রাজ্য পুলিশের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপের সমান।

মোদীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী আরও স্পষ্ট জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী নিজের রাজ্যে কোনও অপরাধের তদন্ত করার অধিকার রয়েছে রাজ্য পুলিশের। সুপ্রিম কোর্টও স্পষ্ট করে দিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে রাজ্যের নাগরিক এবং পুলিশি ক্ষমতা খর্ব করা যায় না। কিন্তু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএসএফের ক্ষমতা বেড়ে গেলে ১১টি জেলা এবং রাজ্যের ৩৭ শতাংশ এলাকায় রাজ্য পুলিশের ক্ষমতা খর্ব হবে।

ওই চিঠিতে মমতা আরও লিখেছেন, "একমাত্র সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই বিএসএফ গড়া হয়েছিল। তাদের কাজের পরিধি ৫০ কিলোমিটার বাড়ালে সীমান্তবর্তী নয়, এমন অনেক এলাকাও সেই বৃত্তে ঢুকে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী এ ব্যাপারে রাজ্যের অনুমতি নেওয়া উচিত কেন্দ্রের। তার তোয়াক্কা না করেই একতরফা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। এ রাজ্যের সীমান্ত এলাকার আশপাশের বেশির ভাগ জায়গাই ঘন বসতিপূর্ণ। সেখানে বিএসএফ থাকলে সমস্যার সৃষ্টি হবে। ঘনঘন বদলি হওয়ার ফলে বিএসএফ জওয়ানেরা সেই সব জায়গা সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার সুযোগও বিশেষ পাবেন না, এলাকার ভাষাও তারা বোঝেন না। তাই ওই সব এলাকায় শাসনকাজের ক্ষেত্রে বিএসএফের থেকে রাজ্য পুলিশ বেশি কার্যকর।"

XS
SM
MD
LG