অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের জট এখনো খোলেনি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অশান্ত


নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ- ফাইল ফটো- এএফপি
নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ- ফাইল ফটো- এএফপি

মুহিবুল্লাহ হত্যাকণ্ডের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অশান্ত, অস্থির। নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে। এক অজানা ভয় পেয়ে বসেছে রোহিঙ্গাদের। টেকনাফ ও উখিয়ায় ৩৪টি ক্যাম্প রয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের আওয়াজে মাঝে-মধ্যেই ক্যাম্প কেঁপে ওঠে। কারা এই অস্ত্র সরবরাহ করছে? কি তাদের উদ্দেশ্য? এটা অনেকটা স্পষ্ট, প্রত্যাবাসন বিরোধীদের হাতেই বেশি অস্ত্র। ক্যাম্পগুলো এখন অনেকটা দ্বিধাবিভক্ত। একপক্ষ যেকোনোভাবে নিজের দেশে ফিরতে চায়। অন্যপক্ষ মনে করে, এভাবে দেশে ফিরলে নতুন করে বিপদ আসতে পারে।

ক্যাম্পের ভেতরে ৯টি গ্রুপ এখন সক্রিয়। এর মধ্যে আছে মাস্টার মুন্না বাহিনী, মৌলভী বাহিনী, রকি বাহিনী, শুক্কুর বাহিনী, আব্দুল হাকিম বাহিনী, সাদ্দাম গ্রুপ, জাকির বাহিনী, নবী হোসেন বাহিনী ও গিয়াস বাহিনী ।মুহিবুল্লাহ ছিলেন প্রত্যাবাসনের পক্ষে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তিনি নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলছিলেন।

প্রত্যাবাসনবিরোধী পক্ষের তৎপরতা নিয়ে ক্যাম্পের ভেতরেই নানামুখী আলোচনা। ক্যাম্পের ভেতরে ভীতিকর পরিবেশ তৈরিতে অবৈধ অস্ত্রের রয়েছে মুখ্য ভূমিকা। কথায় কথায় যেকোনো গ্রুপ অস্ত্র তাক করে। মাদক ব্যবসায়ীরাও সক্রিয়। গত চার বছরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের রিপোর্টে এমনটাই বলা আছে। বেসরকারি হিসাবে আরও বেশি। এসব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন মুহিবুল্লাহ।

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) তাকে বার কয়েক হুমকিও দিয়েছিল। কিন্তু মুহিবুল্লাহ দমেননি। সাধারণ রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে জনমত তৈরি করছিলেন। অসম্ভব জনপ্রিয় এই রোহিঙ্গা নেতার হত্যাকাণ্ডের পর রোহিঙ্গাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে অবশ্য আশঙ্কা করছেন, সামনে বড় ধরনের কোনো সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে। ধারণা করা হয়, এসব সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে মিয়ানমারের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। মিয়ানমার বরাবরই চায়- ক্যাম্পগুলোর ভেতরে অস্থিতিশীল পরিবেশ জিইয়ে রাখা। তারা বিশ্বকে দেখাতে চায়, রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী।

মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পর মিয়ানমারের বেশিরভাগ মিডিয়া কোনো খবরই ছাপেনি। দুটো সংবাদপত্র বার্তা সংস্থার বরাতে খবর ছেপেছে। তাও গুরুত্বহীনভাবে।

গত ৪ বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২২ ধরনের অভিযোগ এসেছে থানায়। এসব অভিযোগে মামলা হয়েছে ১২৯৮ টি। এতে আসামি করা হয়েছে ২৮৫০ জনকে। এদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্র, মাদক পাচার, মানবপাচার, পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সনেই ১৮৪ টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।

ওদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের জট এখনও খোলেনি। জানা যায়নি কারা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল। ইতিমধ্যেই জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃত দুইজনকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এপিবিএন'র অধিনায়ক নাইমুল হক।

XS
SM
MD
LG